এবারের ঈদে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত কয়েকটি নাটক নিয়ে লিখেছেন জাহীদ রেজা নূর, শওকত হোসেন, সাইদুজ্জামান রওশন, কবির বকুল, পল্লব মোহাইমেন, ফিরোজ জামান চৌধুরী, সিমু নাসের ও ইকবাল হোসাইন চৌধুরী


কক্ষপথে মন
ঈদের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে একটি চ্যানেলে জনপ্রিয় একজন অভিনেতার সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। তাঁর বেশ কয়েকটি নাটক এই কদিনে প্রচারিত হয়েছে। শুনলাম, তিনি বলছেন, আজকালকার নাটকের কারিগরি মানের অনেক উন্নতি হলেও গল্পের অবস্থা বেশ খারাপ। প্রায় সব নাটকের গল্পই এক রকম মনে হয়। এ কথাটা মাথায় রেখে দেখতে বসেছিলাম আলভী আহমদের নাটক কক্ষপথে মন। প্রচারিত হয়েছিল দেশ টিভিতে।


নাটকের শুরুটাই বলে দিল, এটা ঠিক গতানুগতিক গল্প নয়। সরাসরি গল্পে না ঢুুকে নাটকের চরিত্রগুলো, তাদের মানসিকতা এবং গল্পটা যেখানে আবর্তিত হচ্ছে, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। নিম্নবিত্তরা থাকে এলাকাটিতে। সেখানেই সাময়িক সময়ের জন্য বাধ্য হয়ে থাকতে আসেন দীপা ও কায়সার দম্পতি। সুন্দরী দীপা (তিশা) সবার মনোযোগ কেড়ে নেন। রেডিও-টেলিভিশন মেকানিক সেলিম (শহীদুজ্জামান সেলিম) কিংবা বাড়িওয়ালা মিঠু ভাই দীপার মনোযোগ পেতে প্রতিযোগিতায় নামেন। দীপার স্বামী বাজারে যান না, এমনকি দোকান থেকে সিগারেট আনতেও অনীহা। অন্যদিকে ‘গা বাঁচিয়ে কীভাবে ছেলেদের নাচাতে হয়’ তা ভালোই জানেন দীপা। পরনারীর প্রতি আকর্ষণ টের পেয়ে দুজনকেই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন দীপা। সামান্য একটু ছোঁয়া কিংবা খানিকটা ইঙ্গিতেই কাজ হয়ে যায়। ফলে দীপার বাজার করে দেওয়া কিংবা মাথায় করে নষ্ট টেলিভিশন দোকানে নিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। মেকানিক সেলিম কত দূর এগোনো যাবে, কল্পনা করেন আর ছেলের পাশে ঘুমন্ত স্ত্রীকে জাগাতে চেষ্টা করেন। দীপা যখন চায়ের পাতা আনতে বলেন, রাজি হয়ে যান সেলিম, কিন্তু দীপার স্বামীর সিগারেট আনতে বললে অপমানবোধ কাজ করেন। দ্রুতই সেলিম বুঝে ফেলেন, দীপার এই কাজে সমর্থন আছে স্বামীর।


এই হচ্ছে কক্ষপথে মন-এর গল্প। মোটেই গতানুগতিক গল্পের নাটক বলা যাবে না। এর বাইরে এসে কেউ কেউ যে সাহস ও পরিপক্বতা দেখাচ্ছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল নাটকটি দেখে। সমাজে অনেক কিছু ঘটলেও সেসব যেন নাটক-সিনেমায় উচ্চারণ করা নিষেধ। সেদিক থেকে এই নাটক অনেকটাই সাহসী। তিশাও এ ধরনের একটি চরিত্রে অভিনয় করতে সাহস দেখিয়েছেন এবং যতটা সম্ভব নারীলোভী পরপুরুষকে ব্যবহার করার ছলাকলাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। ক্যামেরাও সাহসের সঙ্গে তিশাকে অনুসরণ করেছে। ভালো লেগেছে শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়। গতানুগতিকতার বাইরে ব্যতিক্রমী এ নাটকটি দেখতে খানিকটা অস্বস্তি লাগে। এই অস্বস্তি নাটকের গল্পের জন্য নয়, বরং আমাদের সমাজে এ রকম ঘটছে, এটা উপলব্ধি করে।


রঙিন শাড়ি
শাড়ি কাপুড়...। ঢাকাই শাড়ি, সুতি শাড়ি, জামদানি শাড়ি ফেরি করে ফেরে রাহেন মোল্লা। মা-বাবা নেই, এতিম। সচ্ছল গেরস্ত গ্রাম-সম্পর্কের চাচা-চাচিই তার মা-বাবার অভাব যেন পূরণ করে দেন। শাড়ি ফেরি করতে করতেই অন্য গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে চোখাচোখি। মেয়েটিরও মা-বাবা নেই। মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। মামা-মামি মেয়েটির পাত্র হিসেবে বেছে নেন রেহান মোল্লাকে। রঙিন শাড়ি পরে মেয়েটি বউ হয়ে আসে। চাচার বাড়ি গরু ‘বুদি’ সরল মেয়েটির যত্নআত্তি হয়। স্বামী-স্ত্রীর দারুণ মিল। রেহান আর শাড়ি ফেরি করে বিক্রি করবে না, একদিন তার নিজের দোকান হবে, এমন স্বপ্ন দেখায় মেয়েটি। রেহানের পরিবারে নতুন অতিথি আসার আভাস মেলে। অন্তঃসত্ত্বা হাসিখুশি মেয়েটি পুকুরঘাটে স্বামীর সঙ্গে মজা করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়। স্বপ্নভঙ্গের শুরুটা এখানে। অপরদিকে বুদিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে বুদি সুস্থ হয়ে উঠলেও মেয়েটি ভুগে ভুগে মারা যায়। তবে মেয়েটির স্বপ্ন পূরণ হতে দেখা যায়, রেহানের নিজের দোকান হয়। কিন্তু দিনশেষে নিজের ঘরে এসে রেহান মোল্লার নিঃসঙ্গতা বাড়তেই থাকে। শুধু রঙিন স্মৃতিগুলোই যেন রেহানের সম্বল।
শাহনেওয়াজ কাকলীর রঙিন শাড়ি নাটকটিতে স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ আর বেঁচে থাকার বাস্তবতা উঠে আসে এমন করেই। চ্যানেল আইতে প্রচারিত এ নাটকের মূল গল্প শেখ জহিরুল হকের। কম বয়সী একটি মেয়ের রঙিন স্বপ্ন নাটকে ডানা মেলে রঙবেরঙের শাড়িতে। দৃশ্যায়নে এ ব্যাপারটা ভালোভাবেই বোঝা গেছে। অভিনয় করেছেন প্রাণ, অপর্ণা, শহীদুল আলম সাচ্চু, মোমেনা চৌধুরীসহ অনেকেই।


মায়া এবং মৃত্যুর গল্প
প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারি—এ রকমই একটা দৃষ্টিকোণ থেকে নাটকটি দেখা। দর্শন বিচারে প্রথমেই আসে কারিগরি দিক। লোকেশন নির্বাচন, ক্যামেরা, আলো—অমিতাভ রেজার প্রায় সব নাটকেই এ বিষয়গুলোতে মুনশিয়ানার ছাপ পাওয়া যায়। এবার ঈদের তৃতীয় দিন রাতে এনটিভিতে প্রচারিত মায়া এবং মৃত্যুর গল্প এর ব্যতিক্রম নয়।
মায়া এবং মৃত্যুর গল্প নাটকটি চমৎকার নির্মাণের জন্য নাট্যকার এবং পরিচালক অমিতাভ রেজাকে একটা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে এ নাটকের আলোচনায় যাই।


নিতুকে না পেয়ে আত্মহত্যা করে শোভন। পুত্র হারানোর শোকে পাথর শোভনের মা। তবুও নিতুর প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার কমতি নেই তাঁর। ছোট ছেলে ছোটনকে দিয়ে নিতুর জন্য পায়েস রান্না করে পাঠান তিনি।স্বামীর সঙ্গে ঢাকা চলে যাচ্ছে নিতু। যাওয়ার পথে সে দেখা করতে আসে শোভনের মায়ের সঙ্গে। এ বাড়িতে তাঁর ছেলের বউ হয়ে যে আসবে, তার জন্য শোভনের মা খুব যত্ন করে কিছু অলংকার রেখেছিলেন। সেই অলংকার তিনি তুলে দেন নিতুর হাতে—এ রকম ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় মায়া এবং মৃত্যুর গল্প।


আগে ধন্যবাদের কাজটি শেষ করি। এ তালিকায় প্রথমেই রাখতে হচ্ছে জয়াকে; নিতুর চরিত্রে তাঁর সাবলীল অভিনয়ের জন্য। দাগ কেটেছে আরেকজনের অভিনয়; ছোটন চরিত্রে কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ে প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। আর মায়ের ভূমিকায় নার্গিস আক্তার আর শোভন চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী যথাযথ। আর চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামানের জন্য রইল বিশেষ ধন্যবাদ।
তবে নাটকটি দেখতে গিয়ে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হয়েছিল, এর একটি হলো শব্দ প্রক্ষেপণ। এ সমস্যার কারণে কখনো কখনো সংলাপ বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। আর গল্প বলার ক্ষেত্রেও অমিতাভ রেজার এগিয়ে যাওয়ার পথটা সরল ছিল না। মনে হয়েছে, তিনি যেন ইচ্ছে করেই দর্শকদের একটা ধাঁধার মধ্যে রেখে আরও গভীরে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিজ্ঞাপনচিত্রের উৎপাতে টিভি নাটকের দর্শকের কি এত গভীরে ঢোকার জো আছে? যদিও দর্শক সহজভাবে বলাটাই বেশি পছন্দ করে। তার পরও গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে অমিতাভ রেজার মায়া এবং মৃত্যুর গল্প অনেকটাই কামিয়াব।


নকশীকাঁথা
নকশীকাঁথা নাটকের কাহিনি নতুন কিছু নয়, এ ধরনের নাটক আগেও দেখেছি আমরা। গরিব পরিবার, অভাবের সংসার, কিছুটা সচ্ছলতার সন্ধানে স্বামীর গৃহত্যাগ, অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী, ভালো লাগার মানুষের আবির্ভাব ইত্যাদি ঘটনা, যা ধাবমান সময়ের যেকোনো বিন্দুতেই সত্য। মানুষের ব্যাখ্যাহীন মনোজগতের বয়ানই এই নাটক। পুরোনো, তবু নতুন।
মাতিয়া বানু শুকুর গল্প বলার মুনশিয়ানাই নাটকটি নিয়ে লিখতে বসার কারণ। সাধারণ কাহিনির নাটকটির প্রতি দর্শকের আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন কিছু অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করেই। স্বামী, স্ত্রী, প্রেমিকপুরুষ, বেদেনি—এসব মূল চরিত্রের পাশাপাশি গ্রামের কাঁথা সেলাই করা মেয়েটিকে কাহিনিতে স্থান দিয়ে নাট্যকার আসলে এই আগ্রহ তৈরি করার কাজটি এগিয়ে দিয়েছেন। নির্দেশক তা গুছিয়ে বলতে পেরেছেন। আমি তো বলব, দুই বাচ্চার মা, গ্রামের অসহায় এই মেয়েটির কথাস্রোতেই গ্রামীণ জীবনের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় উঠে এসেছে নাটকে, মানুষের জীবন যে সরলরৈখিক নয়, নানা টানাপোড়েনে তা বহুমুখী হয়ে ওঠে, তারই বাস্তব চিত্রণ দেখা গেছে।
মানুষকে সাদা-কালোয় ভাগ করে ফেলার একটা প্রবণতা আছে আমাদের। যাকে পছন্দ করি, তার সবকিছুতেই থাকে সাদার ছাপ। অপছন্দের মানুষটি অন্ধকারের প্রতিমূর্তি। মানবজীবনকে এ রকম সরলীকরণ করা যে ঠিক নয়, সে কথা আমাদের মনেও থাকে না। একই মানুষ ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন রকম আচরণ করে, এটা তো আমরা জীবনাচরণ থেকেই দেখতে পাই। সে কারণেই নকশীকাঁথা নাটকের স্বাগতা, সজল কিংবা কূটনি বুড়ির মতো কথা বলা মেয়েটির শরীরে আমরা ভালো-মন্দের লেবাস লাগিয়ে দিতে পারি না। নীতিবোধ, ঔচিত্যবোধকে ধারণ করেই জীবন এগিয়ে চলবে, এ রকম সহজ সমাধানেরও তাই প্রয়োজন পড়ে না। নাট্যকার বা নির্দেশকের চেষ্টাও ছিল না কাউকে মহীয়ান করা কিংবা কারও শরীরে কালিমালেপনের। তাই স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়েছে কাহিনি। বিষয় বোঝানোর জন্য অযথা সংলাপ কিংবা আরোপিত দৃশ্যের ‘আবির্ভাব’ ঘটেনি কখনো। এই জায়গায়ই বাহবা পেতে পারেন মাতিয়া বানু শুকু। স্বাগতা নামের মেয়েটির অভিনয়ে পরিপক্বতার আভাস আছে। সজলকেও যথেষ্ট উচ্ছল মনে হয়েছে। চরিত্রের দাবি মিটিয়েছেন দুজনই। স্বাগতার স্বামী কাহিনিতে ছিলেন অল্পক্ষণ, কিন্তু তাতেই স্বাভাবিক অভিনয়ে মন ভরিয়েছেন দর্শকের। কূটনামিতে দক্ষ মেয়েটি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যেভাবে নিজেকে পরিবর্তন করে নিচ্ছিল, তাতে সত্যিই চরিত্রটির প্রতি এবং সেই চরিত্রে অভিনয় করা মানুষটির প্রতি আগ্রহ জন্মে। শুকু যে ডিটেইল এড়িয়ে যান না, তা বোঝা যায় মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে ফিরে আসা বাচ্চা ছেলেটি যখন তার ছোট ভাইটিকে জড়িয়ে ধরে। কত দিন পর দেখা হলো দুই ভাইয়ের!
বেদেনির বিষয়টি আরেকটু ভালোভাবে আসতে পারত নাটকে। বেদেনি সজলের বিষয়টিকে বরং পুরো নাটকের মধ্যে দুর্বল বলা যায়। আরেকটি কথা, স্বাগতার মনের ভেতরের ঝড়টি যদি আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যেত দর্শকদের, তাহলে আরও নিবিষ্টমনে, আরও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে দর্শক ঢুকে যেতে পারত কাহিনির ভেতর।
নাটকটি ঈদে প্রচারিত হয়েছিল বৈশাখী টিভিতে।


ঝগড়ালি
এটিএন বাংলায় শুরু হলো নাটক ঝগড়ালী। তাও আবার দুই ঝগড়ালি নারীর গল্প। এমনিতেই আমরা ঝগড়া দেখতে অভ্যস্ত। আর দুই নারীর ঝগড়ায়ও আমরা এখন আর কোনো আপত্তি করি না। সুতরাং বেশ আয়েশ করেই বসলাম ঝগড়া দেখতে।
মামুনুর রশীদের এ নাটকটি হাস্যরসাত্মক। ‘স্যাটায়ার’ ও ‘এনটারটেইনমেন্ট’ দুটোই আছে। সালেহা ও আফরোজার গল্প। তাঁরা পেশাদার ঝগড়ালি। অর্থের বিনিময়ে কারও পক্ষে ঝগড়া করে আসেন। আর এভাবেই তাঁরা জড়িয়ে পড়েন গ্রামের নানা ঘটনার সঙ্গে। পেশায় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সালেহা ও আফরোজার মধ্যে বেজায় সদ্ভাব। ফলে কঠিন কাজে ‘সিনিয়র’ সালেহার শরণাপন্ন হন আফরোজা। আর এভাবেই অবৈধ দখল করা স্কুলের জমি দখলমুক্ত করার কাজ পান দুজন। সবশেষে সব সমস্যার সমাধান করে দেন এ দুজন।
হাসিঠাট্টার মাধ্যমে একটি বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মামুনুর রশীদ। অশান্তির অন্য পিঠে যে শান্তি থাকে, সেটি বলতে চেয়েছেন নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে। তবে অবৈধ দখলদার, যিনি কিনা স্কুলের এই জমি দখল করতে গিয়ে চারটা খুনও করেছেন, তিনি বা দলের লোক দুই নারীর ঝগড়ার মুখে পালিয়ে যাবেন, সেটি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হয় না। তবে ঘটনার চেয়ে মামুনুর রশীদ সম্ভবত বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ কারণে নাটক হিসেবে মেনে নেওয়া যায়।
বলতেই হবে, নাটকটির বড় প্রাণ সব পাত্রপাত্রীর অভিনয়। সালেহা চরিত্রে ডলি জহুর ও আফরোজা চরিত্রে সম্ভবত শাহনাজ খুশী দারুণ অভিনয় করেছেন। ব্যাপ্তি কম হলেও দখলদারের চরিত্রে এ টি এম শামসুজ্জামানের অভিনয়ও ছিল অনবদ্য। অন্যরাও যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। সব মিলিয়ে নাটকটি উপভোগ্য।


মেঘ ভাঙা রোদ
স্বল্প চরিত্রে বড় বেদনার গল্প নিয়ে নাটক মেঘ ভাঙা রোদ। ঈদে এটিএন বাংলায় প্রচারিত এ নাটকের রচয়িতা মানস পাল। এটি পরিচালনা করেছেন সাইদুল আনাম টুটুল।
রাবেয়া (সাবেরী আলম) কিশোর বয়সে নিক্ষিপ্ত হন যৌনপল্লিতে। একসময় তাঁর গর্ভে আসে মিলি (নাদিয়া)। রাবেয়া যৌনকর্মী হলেও তিনি চান তাঁর সন্তান সভ্য সমাজে আলোর মুখ দেখুক। যৌনপল্লির পাশের দোকানি জুম্মন (জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়)। রাবেয়া তাঁর কোলে তুলে দেন মিলিকে। পালক বাবার ঘরে বড় হতে থাকেন মিলি।
মেঘ ভাঙা রোদ-এ সাংবাদিকের ভূমিকায় দেখতে পাই মীর সাব্বিরকে। শুরুতেই পরিচয় পাই যৌনকর্মীদের ওপর প্রতিবেদনের জন্য তিনি পুরস্কৃত হন। সাংবাদিকের দেখা পাই একটি পুকুরপাড়ে কদলীগাছের তলায়। তিনি তাঁর পুরস্কারের মডেল পরিয়ে দিচ্ছেন মিলির গলায়। অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে প্রেম আছে। না সাংবাদিক মীর সাব্বির, না নায়িকা নাদিয়া—তাঁরা কেউই জানেন না, সাবেরী আলম তাঁদের হবু শাশুড়ি ও গর্ভধারিণী। যৌনকর্মী রাবেয়ার সাক্ষাৎকার সাংবাদিক সাব্বিরের প্রতিবেদনের মূল বিষয়।
তবে পালক বাবা চান, সত্য উন্মোচিত হোক। মায়ের সঙ্গে মিলির দেখা হোক। পরিচয় হোক। আমরা দেখি পার্কে এসে পালক বাবা ও রাবেয়ার সাক্ষাৎ, মিলির ভরণ-পোষণ ও পড়ালেখার টাকা পালক বাবার হাতে রাবেয়াকে তুলে দিতে। এটা মিলির অজানা।
সত্য প্রকাশ হয়। মিলি জানতে পারেন, কে তাঁর মা। মা একজন যৌনকর্মী। তাঁর মাথায় তো পুরো আকাশই ভেঙে পড়ার কথা। কিন্তু না। আকাশের নিচে ঘরের ছাদ ছিল যে! পুরো আকাশটা পড়ল না। মানে, মিলির অভিনয়ে ভেঙে পড়ার সেই যন্ত্রণা আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু যতটুকু ভেঙে পড়েছিল, তা থেকে উদ্ধারের জন্য বাবা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় মেয়ের কাছে রাবেয়ার করুণ কাহিনি তুলে ধরেন। তাতেই কাফি। নাটকে কত সহজ! যৌনকর্মী মাকে মেয়ে মেনে নেবেন না। সাব্বিরও যৌনকর্মী শাশুড়িকে মেনে নেবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানতেই হয়। নাটকে যা লেখা আছে। সাবেরী আলম ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত দরদ দিয়ে চরিত্র দুটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তুলনায় অভিনয়-দক্ষতায় নাদিয়া ও সাব্বির অনেকখানি পিছিয়ে। মানস পালের কাহিনিটা মনে থাকার মতো। তবে কুশীলবদের অভিনয়-দক্ষতা মোটেই ভালো নয়।


লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডায়িং
রূপকথার শেষ লাইনে এমনটা প্রায়ই থাকতে দেখা যায়, ‘...অতঃপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।’ কিন্তু বাস্তব জীবন তো এমন নয়ই, ইদানীং নাট্যকার ও পরিচালকের কারসাজিতে নাটকের পাত্রপাত্রীদের জীবনও অত্যন্ত দুঃখময় হয়ে উঠছে। প্রেম, বিয়ে, বিরহ, মান-অভিমান, সাংসারিক জটিলতা, পরকীয়া আর শেষে নায়কের দুরারোগ্য ক্যানসারে মৃত্যুর কারণে বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দার জীবনটাও আজকাল বড্ড কঠিন। এ নাটকেও তেমনই এক কঠিন জীবনের গল্প ফেঁদেছেন নির্মাতা। যে গল্প আমাদের সবার জানা, তবু এই জানা গল্পটাই বারবার শুনতে ইচ্ছে করে কথকগুণে। আর এ ক্ষেত্রে ওয়াহিদ তারেক বেশ ভালো কথক। তিনিই এই নাটকের নির্মাতা। তাঁর সুন্দর নির্মাণগুণেই পুরোনো গল্প আবারও শুনতে (পড়ুন দেখতে) বসে নাটকের পাত্রপাত্রীর দুঃখটা অনুভূত হয়েছে হূদয়ে।
এটা এমনই এক গল্প, যে গল্পে জীবনটা এক ম্যাজিক। তবু এই ম্যাজিকময় জীবনে নিজের সন্তানকে খুশি করতে নতুন নতুন ম্যাজিক শিখতে হয় বাবাকে। তারপর সে অপেক্ষা করে। সপ্তাহের একদিন মেয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে সেই ম্যাজিকের গৃহপ্রদর্শনী। হ্যাঁ, সপ্তাহের এক দিনই। কারণ ওই এক দিন মেয়েকে কাছে পায় সে। মা মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি, তারপর নিজের ভাড়াবাড়িতে ওঠার পর বাবার গৃহে অনেকটা বেড়াতেই আসে মেয়ে। সে বেড়ানো যতই দিন যায়, ততই আনন্দময় হয়ে ওঠে। প্রথম প্রথম বাবাকে খুব একটা পছন্দ না হলেও ম্যাজিকের কারণে মামুখী থেকে ধীরে ধীরে বাবামুখী হয়ে ওঠে মেয়ে। বাবার প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকার সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে গলার ক্যানসারে বাবার দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকা। অতঃপর নানা ঘটন-অঘনের মধ্য দিয়ে যখন মা সিদ্ধান্ত নেন, সাংসারিক কলহ মিটিয়ে মেয়েকে নিয়ে নিজ গৃহেই ফিরে আসবে, তখন বোঝা যায় এই পরিচালক ‘সুখে-শান্তিতে’ বিশ্বাসী নন। অতএব, জটিলতা একটা হবেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ, মা-মেয়ে ঘরে এসে দেখে বাবা চলে গেছে অন্য এক জগতে। দুঃখটা এখানে নয়, অন্যখানে। যখন দেখা যায়, ক্যানসারের কারণে বাকশক্তি হারিয়ে ফোনের এপাশে বসে আছেন বাবা, অন্যপাশে মা-মেয়ে। তারা জানেও না ওপাশের ওই ভালোবাসার মানুষটির কী হয়েছে। চমৎকার এক করুণ আবহ নাটকজুড়ে। সাধারণ একটা গল্পের পরিবেশনায় চমৎকার মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন পরিচালক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মৌটুসী বিশ্বাসের দুর্দান্ত অভিনয়। বাবা চরিত্রে আলিফও ভালো করেছেন। তবে মাঝেমধ্যেই তাঁর একটু অবাবা হয়ে ওঠাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় শেষের দিকে তাঁর কিছু দুর্দান্ত এক্সপ্রেশনের কারণে। ঈদে নাটকটি প্রচারিত হয়েছিল দেশ টিভি চ্যানেলে।


ঈদের টিকিট
কে না জানে, ঈদের আগে বাড়ি ফেরার বাস বা ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা কী ঝক্কির ব্যাপার। সদ্য প্রেমে পড়া কোনো আর্টিস্ট ছেলে যদি তার ভালো লাগা মানুষটিকে টিকিট জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে, তাহলে তা হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার লড়াই! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (চারুকলা) হয়ে বাসের টিকেট জোগাড় করতে পারবে না, এ কি হতে পারে? কিন্তু হায়! আর্টিস্ট ছেলেটা জানে না, গাবতলীতে কত ধানে কত চাল হয়। ঈদের মাসে বাস টার্মিনালে কতোটা অসহায় হতে হয় মানুষকে, তা সে বুঝতে পারল বাস টার্মিনালে যাওয়ার পরই কেবল।
কালোবাজারে টিকেট সংগ্রহ, ছিনতাইকারীর কবলে পড়া, পুলিশের সঙ্গে কথোপকথন-বিড়ম্বনা সব মিলিয়ে কাহিনি যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততোই দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারবে তো? শেষ পর্যন্ত অঙ্কনবিদ্যাই সব মুশকিল আসান করে দেয়। যাত্রার দিনেও থাকে তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।
আনিসুল হকের লেখা, সকাল আহমেদের পরিচালনায় বিটিভিতে প্রচারিত ঈদের টিকিট নাটকটিতে হাসির খোরাক যেমন আছে, তেমনি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সমস্যাগুলোও রয়েছে। তিশার অভিনয় ছিল সাবলীল। আনন্দ কিংবা শংকার প্রকাশে তা বোঝা গেছে বেশি করে। মাহফুজ আহমেদ ভালো, তবে কখনো কখনো তাঁর অভিনয় অতি অভিনয়ের দিকে গেছে। পুলিশ, ছিনতাইকারী কিংবা টিকেটের কালোবাজারির ভূমিকায় যারা অভিনয় করেছেন, তারা চরিত্রের দাবি মিটিয়েছেন। নাটকটি ছিল ভাঁড়ামী-বর্জিত।


অরুপার জন্য
এ নাটকে কেবলই ফ্লাশব্যাকের খেলা। জীবন ও ক্যামেরার। নাগরিকজীবনের টানাপোড়েন ফ্রেম থেকে ফ্রেমে ছড়িয়ে পড়ে।
অরুপার জন্য নাটকটির কাহিনি অতি পুরোনো—প্রধান দুই চরিত্র গরিবের ছেলে আর বড়লোকের মেয়ে। হাজার বছর ধরে চলে আসা পুরোনো কাসুন্দি। কিন্তু এই অতি সাধারণ গল্পটিই অনন্য হয়ে ওঠে মেজবাউর রহমান সুমনের বুদ্ধির ছোঁয়ায় আর নেহাল কোরাইশীর অসাধারণ চিত্রগ্রহণে। সব মিলিয়ে এটি ‘উৎকৃষ্ট পণ্যের’ চেয়ে ‘উৎকৃষ্ট শিল্প’ হয়ে ওঠে।
প্রেমিকার বিয়ে হয়েছে অন্য কোথাও। আজ রাতেই সে যাচ্ছে দেশের বাইরে। ১০ মিনিটের জন্য দেখা করার ইচ্ছায় আকুল অভি (ইন্তেখাব দিনার)। শেষ পর্যন্ত অভির অনুরোধে রাজি হয় অরুপা (কান্তা মাসউদ)। ফ্লাশব্যাকের খেলায় দুলতে দুলতে দুজনের দেখা হয়। কথাও হয় অল্পস্বল্প। অরুপা ‘টুকটাক’ জিনিসের একটি গিফট প্যাকেট ধরিয়ে দেয় অভির হাতে। শেষ উপহার হিসেবে অভি নিয়ে এসেছিল অল্পমূল্যের একটিমাত্র ফুল, যা আর অরুপাকে দেওয়া হয়ে ওঠে না, লুকিয়ে ফেলে। এবার বিদায়। ফিরে যেতে পা বাড়ায় দুজনই। ফিরে তাকায়। দৃষ্টি-বিনিময়। আচমকা দুর্ঘটনা (সম্ভবত গাড়িচাপা পড়ে অভি)। রক্তাক্ত হাতের ক্লোজ শট। জনতার হট্টগোল। একটি পরিত্যক্ত ফুলে এসে ক্যামেরা ফ্রিজ হয়। নাটকের শেষ ফ্রেম। এক গভীর শূন্যতা এসে দর্শকহূদয়ে দোলা দেয়। দর্শক হিসেবে আমার মায়া হয় অরুপার জন্য, অভির জন্য। আসলে মায়া হয় নিজের জন্যও। মনে হয়, মানুষ তো কেবলই ভুল মানুষ।
পড়ে থাকা ছিন্ন ফুলটিই হয়ে যায় দুজনের সম্পর্কের প্রতীক। একটি সম্পর্ক এবং একটি জীবনের সমাপন। অভির মৃত্যু হলো কি না, তা অবশ্য জানা যায় না। অথবা জানার প্রয়োজন হয় না। ছোটগল্প হয়েই থাকে সে রহস্য। দর্শকহূদয়ে বিশাল এক হাহাকার সৃষ্টি করে নাটকটিই শেষ হয়।
অরুপা চরিত্রে কান্তা মাসউদ এবং অভি চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার সাবলীল ও প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সম্পাদনা ও পরিচালনা—চারটি কাজই নিখুঁতভাবে করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন। তাঁকে অভিবাদন। নাটকটি প্রচারিত হয়েছে এনটিভিতে।


জিনের বাদশা সরফরাজ
ছিলেন বাদশা। বনে গেলেন ‘হুকুমের গোলাম’। ষড়যন্ত্রকারীদের পাল্লায় পড়ে প্রদীপের ভেতর বন্দী হয়ে আছেন জিনের বাদশা সরফরাজ। মানসম্মান যাকে বলে, একদম ধুলোয় গড়াগড়ি। প্রদীপের মালিকের হুকুম তামিল না করে কোনো উপায় নেই সরফরাজের। বড়সড় ভজকটটা বাধল তখনই, যখন প্রদীপ গিয়ে পড়ল তিন দুষ্ট লোকের হাতে। প্রদীপে ঘষা দিয়ে সরফরাজকে হাজির করেই তাদের পয়লা আদেশ—বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে সব টাকা এনে দেওয়া চাই। কিন্তু সরফরাজ হাজার হলেও বাদশা মানুষ। এমন মহা অন্যায় তিনি করেন কী করে? মহা কেলেংকারি! স্রেফ ভাগ্যের জোরে সে যাত্রা তিন বদমাশের কাছ থেকে প্রদীপটা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান সরফরাজ। পাকেচক্রে সেই প্রদীপ গিয়ে পড়ল ছোট্ট মিতু আর তার সঙ্গীদের হাতে। এদিকে তিন পাঁজির পা ঝাড়া কিন্তু প্রদীপের আশা ছাড়েনি। সরফরাজকে বাগে আনার জন্য ভয়ংকর সব ফন্দি আঁটতে থাকে তারা। এরপর কীভাবে সরফরাজ মুক্তি পেলেন প্রদীপের অভিশাপ থেকে—এই নিয়ে নাটকের বাকি কাহিনি।
টেলিভিশনে এই এক ঈদে নাটকের সংখ্যা গুনে শেষ করা মুশকিল। কিন্তু এত সবের ফাঁকে বাচ্চাদের মুগ্ধ করার মতো অনুষ্ঠান কই? ‘শিশুতোষ’ অনুষ্ঠান আর শিশুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান যে এক নয়, সেটা আমাদের অনেক চ্যানেলকর্তাদের কাছেই সম্ভবত অদ্যাবধি পরিষ্কার নয়। নয়া জামা-ফ্রক গায়ে, জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে, এপাশ-ওপাশ দুলে দুলে একটা গান। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার আয়োজন বলতে কেবল এই? বড়রা শিশুদের বোকা ভাবতে পারেন। কিন্তু আদতে তো তা নয়। নয় বলেই হয়তো ভিনদেশি হ্যারি পটার, লর্ড অব দ্য রিংস কিংবা শ্রেক বলতে বাচ্চারা অজ্ঞান। মুহম্মদ জাফর ইকবালের রচনা এবং মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় এনটিভিতে প্রচারিত জিনের বাদশা সরফরাজ সেদিক থেকে আলাদা। সেই পুরোনো প্রদীপের কাহিনি ঘিরে হলেও গল্পটা বেজায় অভিনব। যথেষ্ট উত্তেজনা আছে। আছে মজার উপাদানও। তিন শিশু অভিনেতাকেই মনে হয়েছে সম্ভাবনাময় আর চটপটে। জিনের বাদশার বেশে আহমেদ রুবেল বেশ মানিয়ে গেছেন। তবে সেরা অভিনয়টা করেছেন ফককু আর বদি চরিত্রের দুই অভিনেতা। বিশেষ করে মাথায় মোরগঝুঁটি বাঁধা অভিনেতা দুর্দান্ত। নাটকের শেষের একটা মজার দৃশ্য দিয়ে শেষ করি। অপকর্মের শাস্তিস্বরূপ তিন বজ্জাতকে গাছের মগডালে ঝুলিয়ে রেখে গেছেন জিনের বাদশা সরফরাজ। এই অতীব বিচিত্র ঘটনা দেখতে মহা উৎসাহে জড়ো হয়েছে আমজনতা। দারুণ!


অনাকাঙ্ক্ষিত
আমি ‘মেসেজ’সম্পন্ন ছবি তৈরিতে আগ্রহী নই।...চলচ্চিত্র আসলে এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু— অ্যাপিচাটপং ভিরাসেথাকুল (কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ পামজয়ী থাই পরিচালক) সদাচরণ আর পরোপকারিতার কোনো বিকল্প নেই। এই মহান উপদেশবাণী মাথায় রেখেই এক অর্থে পুরো নাটক। এটিএন বাংলায় প্রচারিত মাসুম রেজার লেখা সৈয়দ আওলাদের তৈরি নাটক অনাকাঙ্ক্ষিত। নাট্যকারের (তৌকীর আহমেদ) মুখেই গল্পটা শুনিয়ে ‘নাটকের মধ্যে নাটক’-এর মতো করে শুরুটা অভিনব করার চেষ্টা আছে বটে। কিন্তু সেই চেষ্টা মোটেও মনে দাগ কাটে না পুরো ব্যাপারটা ‘অভিনয় অভিনয়’ খেলা মনে হওয়ার কারণে। নাটকের তিন অভিনেতার (আবুল হায়াত, তৌকীর আহমেদ, তারিন) তিনজনই অভিনয় করেছেন দ্বৈত ভূমিকায়। ছোট করে গল্পটা বলি—
স্ত্রী (তারিন) অসুস্থ। চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে টাকা-পয়সার জোগাড়যন্তর নেই কোনো। সব মিলিয়ে মন-মেজাজ খুব খারাপ স্বামীর (তৌকীর)। এর মধ্যে শুরু হয়েছে পাশের বাড়ির প্রবীণ ভদ্রলোকের উৎপাত। দুটো কাঁচামরিচ কিংবা সিগারেট ধার করার মতো নানা অছিলায় খানিক পরপরই দোরঘণ্টি বাজিয়ে চলেছেন তিনি। স্বামী বেচারা বিরক্তির একশেষ। কিন্তু স্ত্রীর সুপরামর্শে হাসিমুখে এই অত্যাচার মেনে নেন স্বামী। শেষ পর্যন্ত এই চূড়ান্ত ভদ্র ব্যবহারেরই দারুণ একটা পুরস্কার মেলে। লটারিতে ৩০ লাখ টাকা পুরস্কার জেতেন প্রবীণ ভদ্রলোক। সেখান থেকে এক লাখ টাকা তিনি সামান্য ‘সিগারেট’-এর প্রতিদান হিসেবে তুলে দেন স্বামীর হাতে।
বহু পুরোনো সেই ঈশপের গল্পের ঢঙে শেষতক একটি বিশেষ মর্ম বা উপদেশবাণী তুলে ধরতে পারাটাই কি টিভি নাটক বা চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সার্থকতা? মনে হয় না। সবচেয়ে নবীনতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে পরিচিত চলচ্চিত্র এর মধ্যে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। পথনাটক বা মঞ্চনাটক থেকে টিভি বা চলচ্চিত্রের ফারাকটাও তাই এখন বেজায় বড়। কেবল ‘মেসেজ’সম্পন্ন টিভিনাটক তৈরি করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার দিনও তাই সম্ভবত ফুরোতে চলল। নাটকটা তার পরও অনেকের ভালো লাগতেই পারে। আবুল হায়াত পরিচালকের চরিত্রে মানানসই না হলেও পাশের বাসার প্রবীণ ভদ্রলোক হিসেবে তাঁর জায়গা থেকে সফল। আর ‘মেসেজ’সম্পন্ন নাটকের ভক্ত যাঁরা, তাঁরা হয়তো এই নাটক ‘মিস’ করতে চাইবেন না কিছুতেই।


ব্রেকিং নিউজ
স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রতিটি সরাসরি অনুষ্ঠানে সাধারণত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বকে হাজির করা হয়। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে দর্শকের সরাসরি ফোনে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থারও অবতারণা হয়। ঈদে আরটিভিতে প্রচারিত ইফতেখার আহমেদ ফাহমির রচনা ও পরিচালনায় ব্রেকিং নিউজ নাটকটি দেখতে বসে মনে হলো, এটি সেই ভাবনারই অংশ। যদিও হিন্দি নায়ক ছবির (অনিল কাপুর, অমরেশ পুরী, রানি মুখার্জি অভিনীত) প্রেক্ষাপটও অনেকটাই এ রকম। ওই ছবিতে অনিল কাপুর একজন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। তিনি একটি সরাসরি অনুষ্ঠানে ভারতের মুখ্যমন্ত্রী অমরেশ পুরীর মুখোমুখি হন। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্রও জনগণের সামনে তুলে ধরেন। চিন্তাভাবনার দিক থেকে হিন্দি চলচ্চিত্র নায়ক এবং নাটক ব্রেকিং নিউজ-এ অনেকটা সাদৃশ্য থাকলেও গল্প বলার ধরন ছিল পুরোপুরি আলাদা। তাই ফাহমিকে নকলের দায় থেকে মুক্ত করে ব্রেকিং নিউজ-এ যাই।
সমাজসেবক তোজাম্মেল হোসেন একটি টিভি চ্যানেলের সরাসরি অনুষ্ঠান ‘তারকালাপ’-এ আসেন। সঞ্চালক বিন্দুর মুখোমুখি হন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান থাকা সত্ত্বেও তিনি পর্দার আড়ালেই ছিলেন এত দিন। এবারই প্রথম তিনি দর্শকের সামনে হাজির হয়েছেন। আর তাতেই যেন বিপত্তি ঘটল। বাচ্চু নামের একজন দর্শক সরাসরি ফোন করে নাটকীয়ভাবে মোজাম্মেল হোসেনের মুখোশ উন্মোচন করে দিলেন। বাচ্চুর মতো আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীও ফোনে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। দর্শক জানতে পারল, সমাজসেবকের আড়ালে এই মোজাম্মেল একজন আদম ব্যবসায়ী ও প্রতারক।
মোজাম্মেল হোসেনের চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিম, সঞ্চালক বিন্দু ও বাচ্চু চরিত্রে আ খ ম হাসান দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। প্রযোজকের ভূমিকায় সংগীত পরিচালক ফুয়াদকেও বেশ মানিয়ে গেছে।
ইনডোর দৃশ্যে উতরে গেলেও আউটডোর দৃশ্যায়নে ক্যামেরার কাজ কখনো কখনো দুর্বল মনে হয়েছে। আবহসংগীত ভালো হয়েছে।


কাঁটা
শহীদুল জহিরের কাঁটা গল্পটির রহস্যময়তা ছড়িয়ে ছিল পুরো নাটকে। একই নামের এ নাটকটি তৈরি করেছেন অনিমেষ আইচ। পুরান ঢাকার একটি গলিতে (শহীদুল জহিরের লেখায় সেটা ভজহরি সাহা স্ট্রিট বা ভূতের গলি) কিছু রহস্যময় ঘটনার বয়ান এই নাটক। এই গলির বাসিন্দারা মনে করে, তারা একটি চক্রাবর্তের ভেতর আটকা পড়ে গেছে। গল্পে আছে একাত্তর, আছে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঢেউয়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতা। আর আছে ২০১০। এই সালটির কোনো নির্দিষ্ট মানে নেই, সেটা ২০২০ হতে পারে, হতে পারে ২০৩০ কিংবা অন্য কোনো সাল। এটা শুধু মনে করিয়ে দেওয়া, একই ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো সময়ই। সচেতন না হলে বাছবিচারহীন হয়ে নৃশংসভাবে মনুষ্য-নিধনের ব্যাপারটি মুড়ি-মুড়কি খাওয়ার মতো ব্যাপারে পরিণত হতে পারে।
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরান ঢাকার একটি গলিতে রাজাকারদের লম্ফঝম্ফ ফুটিয়ে তুলেছেন অনিমেষ। এখানে ইমাম হিসেবে মামুনুর রশীদের অতি-অভিনয় করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল, কিন্তু সে লোভ সামলেছেন বলে ধন্যবাদ পেতে পারেন তিনি। কুলসুম নামের মেয়েটি, যে কিনা এই গলির প্রথম শহীদ, তাঁর পরিচিতি দিতে গিয়ে গল্পকার বলেছেন, ‘প্রায় স্বাধীন নারী এবং তার বয়স ছিল চলতে-ফিরতে ছলকানোর মতো।’ অনিমেষ অবিকল সেই মেয়েটিকেই এনে হাজির করেছেন তাঁর নাটকে। ভালো অভিনয় করেছে মেয়েটি। তবে রাজাকারদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার সময় মুখে চামচ রেখে সেই চামচে মার্বেল দেওয়ার (সেই মার্বেলও একালের প্লাস্টিকের মার্বেল, মোটেই ‘গুল্লি’ খেলার মার্বেল নয়) বিষয়টিতে হাস্যরস হয়তো আছে, কিন্তু তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। রাজাকারদের নিষ্ঠুরতার বিপরীতে তাদের নিয়ে রসিকতা কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা উচিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করছেন বা করবেন এমন নির্দেশকদের। এ ধরনের দৃশ্য নির্দেশকের পরিমিতিবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
পুরান ঢাকার আবহটি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অনিমেষ আইচ। স্বপ্নার ভূমিকায় অভিনয় করা মেয়েটির চোখে-মুখে ফুটে ওঠা অসহায়ত্ব, আতঙ্ক প্রাণ ছুঁয়ে যায়। শহীদুজ্জামান সেলিম ও মোশাররফ করিম তাঁদের অভিনয়ে সাবলীল। পাকিস্তানি সেনা, রাজাকারদের দাপটে অসহায় সাধারণ মানুষের ভয়ার্ত চেহারা, স্বাধীন দেশেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উসকে দেওয়ার ভাষায় তৃপ্ত হয় দর্শকমন। তবে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর সুবোধ (মোশাররফ করিম) মিষ্টি কিনে এনেছেন এবং মনের সুখে খেয়েছেন, এ রকম একটি ঘটনা গল্পে ছিল, যার কোনো শক্তিমান কথক ছিল না, বাড়ির চাকরবাকরদের কারও মুখ থেকে শোনা এ ঘটনার রেশ ধরে সুবোধের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া—এ বিষয়টি নাটকে থাকলে ভালো হতো বলে মনে হয়।
তার পরও বলতে হবে, নাটকের কোনো চরিত্রকেই হেলাফেলা করেননি নির্দেশক। ঢাকাইয়া ভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন অভিনয়শিল্পীরা।
যে নাটক শেষ হলেই ভুলে যাওয়া যায়, এবার ঈদে দেশ টিভিতে প্রচারিত কাঁটা ঠিক সে ধরনের নাটক নয়। নাটক শেষ হওয়ার পরও তার অনুরণন নিবিড়ভাবে প্রচ্ছন্ন থাকে মনে। অনিমেষ আইচ সেই আবহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন।


হারানো সুর
ফজলুর রহমান বাবু পেশায় কুমার। আবার বাঁশের বাঁশিও তৈরি করেন। বাঁশি বাজানও তিনি। স্ত্রী স্বাগতার সঙ্গে অম্লমধুর সম্পর্কটা বোঝা যায়। তবে সংসারের আয়ের জন্য তেমন কিছু করেন না বাবু, তা নিয়ে ক্ষোভ স্বাগতার মনে। আবার বাবুর বাঁশির সুর তাকে টানেও বেশ। এভাবেই এগিয়ে চলে চ্যানেল আইতে প্রচারিত হারানো সুর নাটকটি। একদিন বাবুর এক বন্ধু আ খ ম হাসান আসে বাড়িতে। বন্ধুটিও বাঁশি বাজায়। বাবু বাড়ি নেই, বন্ধু বাঁশি বাজাচ্ছে—স্বাগতা তার মধ্যে দেখতে পায় কৃষ্ণের রূপ। তার কাঁধে মাথা রাখে। ভুল বুঝে হাসান স্বাগতার ওপর জোর খাটাতে চায়। স্বাগতা দা দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় হাসানকে। বাড়ির উঠোনে চলে আসা মা রানি সরকারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এরপর একদিন স্বামীকে জানায়, সে চলে যাবে তীর্থে। বাবু বাজাতে থাকেন বাঁশি।
গিয়াসউদ্দিন সেলিমের হারানো সুর নাটকে আলো-আঁধারির চিত্রায়ণ চোখে পড়ার মতো। চমৎকার কিছু দৃশ্যায়ন দেখা গেছে নাটকটিতে। তবে মাঝেমধ্যেই কুমার পরিবারে বা অন্যদের প্রমিত বাংলার সংলাপ কানে লাগে। স্বাগতার রূপসজ্জাও দু-এক জায়গায় চরিত্রের সঙ্গে মানায় না। বাঁশি দিয়ে শুরু, বাঁশি দিয়েই শেষ হয় নাটক। বাঁশিতেই যেন বেজে ওঠে হারানো সুর। 

'অন্নপূর্ণা' নামের সপ্তম প্রজন্মের সুপার কম্পিউটার তৈরি করেছে ভারত। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে এই সুপার কম্পিউটারটি তৈরি করেছে চেন্নাইয়ের দ্য ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সেস (আইএমএসসি)। ভারতের আণবিক কমিশনের চেয়ারম্যান শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে সুপার কম্পিউটারটি উদ্বোধন করেন। ১.৫ টেরাবাইট মেমোরি এবং ৩০ টেরাবাইট ধারণক্ষমতার সুপার কম্পিউটারটি আইএমএসসি'র বিভিন্ন ধরনের বায়োলজিক্যাল গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হবে।

সৌজন্যে : দৈনিক কালের কণ্ঠ

কম্পিউটারের চেয়ে এবার স্মার্টফোন হ্যাকিংয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে হ্যাকাররা। আর এ কারণেই সারা বিশ্বে বাড়ছে স্মার্টফোন হ্যাকিং, জানিয়েছে মোবাইল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান লুক আউট। লুক আউটের প্রতিষ্ঠাতা জন হেরিগ জানান, হ্যাকাররা ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্যসহ ব্যক্তিগত তথ্যাদি নেওয়ার জন্যই সাইবার আক্রমণ চালায়। ব্যবহারকারীরা বর্তমানে এসব তথ্য কম্পিউটারে রাখার চেয়ে স্মার্টফোনেই বেশি রাখছে। আর এ কারণেই হ্যাকাররাও তাদের লক্ষ্য বদল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে হ্যাক করার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে হ্যাকাররা। অন্যদিকে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা হ্যাকিং সম্পর্কে তেমন সচেতন না হওয়ায় খুব সহজেই হ্যাকাররা স্মার্টফোন হ্যাক করতে পারছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার ফলেও ব্যবহারকারীদের হ্যান্ডসেটের গোপন তথ্য চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে। বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো সাইট থেকে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছে লুক আউট।

সৌজন্যে : দৈনিক কালের কণ্ঠ

ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের সময় আরো পাঁচ মিনিট বৃদ্ধি করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ব্যবহারকারীরা এখন সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময়ের ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। এতদিন ইউটিউব ব্যবহারকারীরা ১০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিও আপলোড করতে পারতেন।
নতুন এ সুবিধা চালু করে ইউটিউবের পণ্য ব্যবস্থাপক জশুয়া সায়গল বলেন, 'অনেক দিন ধরেই ব্যবহারকারীরা ইউটিউবে দীর্ঘ ভিডিও আপলোডের সুযোগ দেয়ার দাবি করে আসছিলেন। কারিগরি কারণে আমরা এটা করতে পারিনি। কিন্তু বর্তমানে আমরা আমাদের কারিগরি সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছি।'


বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কম্পিউটারবিজ্ঞানী জাভেদ করিম এবং তাঁর দুই বন্ধু মিলে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব তৈরি করেছিলেন। ২০০৬ সালে ১৬৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে এটি কিনে নেয় গুগল।

সৌজন্যে : দৈনিক কালের কণ্ঠ

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রাদেশিক সরকারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সৃজনশীল সফটওয়্যার তৈরির প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ছয়জন বাংলাদেশি প্রোগ্রামার। ‘অ্যাপ মাই স্ট্যাট’ নামের এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি তথ্যভান্ডারকে কাজে লাগিয়ে জনসাধারণের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের সহযোগী অথবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সহায়ক সৃজনশীল সফটওয়্যার তৈরি করা। বাংলাদেশি ছয়জন প্রোগ্রামার শহীদ, শায়লা, রুনা, কামরুল, তানভীর ও সৈকতের তৈরি ‘রিমাইন্ড এনিওয়ে (আরএডব্লিউ—র)’ নামের সফটওয়্যারটি জিতে নেয় সেরার পুরস্কার। ছয়টি মূল বিভাগের মধ্যে জনপ্রিয় (পপুলার চয়েস) বিভাগে পুরস্কার জিতেছে আরএডব্লিউ সফটওয়্যারটি। মেলবোর্নে চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দলটি পেয়েছে ১০ হাজার ডলার পুরস্কার।
পুরস্কারজয়ী প্রোগ্রামাররা ই-মেইলে প্রথম আলোকে জানান, মোবাইল ফোনের জন্য গুগলের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডে ব্যবহার উপযোগী এ সফটওয়্যার প্রাত্যহিক নানা ধরনের কাজকে অনেক সহজ করে দেবে। নির্মাতারা সফটওয়্যারটিতে ভিক্টোরিয়া এলাকার সব স্থাপনাকে আরএডব্লিউর সার্ভারে রেখেছেন, যাতে মোবাইলের গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) মাধ্যমে তালিকা অনুযায়ী কাজের অনুসন্ধানও পাওয়া যাবে। এমন সব সুবিধা দেখে প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সফটওয়্যারের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয়েছে আরএডব্লিউ সফটওয়্যারটি। ভবিষ্যতে জনপ্রিয় গুগল ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আরএডব্লিউর সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা।প্রতিযোগিতার বিস্তারিত জানা যাবে www.premier.vic.gov.au/app-my-state ওয়েবসাইটে এবং সফটওয়্যারের বিস্তারিত www.remindanyway.com ঠিকানায়।

সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো