ইন্টারনেট ব্যবহার আধুনিক যুগের অত্যাবশ্যকীয় কাজ, অবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই এখন প্রত্যহ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেটের এ বহুমাত্রিক ব্যবহার এখন ভাবিয়ে তুলেছে অভিভাবকদের। একটা সময় ছিল যখন বাচ্চারা টেলিভিশন সেটের সামনে বেশিক্ষণ বসে থাকলে অভিভাবকরা চিন্তিত হতেন। এখন টেলিভিশন নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে তারা যথেষ্ট চিন্তিত। তাছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সবসময় ইন্টারনেট ব্যবহারে সত্যিই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। কারণ এমন কিছু তথ্য ছবি, ভিডিও বা ক্লিপিং থাকে যা বিপথে যেতে শিশুদের প্ররোচিত করে। এসব নিয়ে পিতা-মাতারা এখন যথেষ্ট উদগ্রীব। বিভিন্ন জরিপে তাদের এ দুঃশ্চিন্তার কথা উঠে এসেছে। বিভিন্নভাবে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, শিশুরা (৯-১৭ বছর) যে সব কাজে ওয়েব সাইট ব্যবহার করে সেসব সাইটসমূহে অনাকাঙিক্ষত অনেক সাইট অনুপ্রেবেশ করে ফলে এসব নিয়ে অভিভাবকদের বিপদে পড়তে হয়। শিশুরাও বিপথগামী হতে সচেষ্ট হয়। ফলে ভালোর চেয়ে অপব্যবহারের দিকেই ঝুঁকে শিশুরা। এসব বিষয়াদি নিয়ে চিন্তা করে উইন্ডোজ ভিসতা সিস্টেমে শিশুদের জন্য যত্রতত্র ইন্টারনেট ব্যবহার সংরক্ষিত ও শিশুদের সতর্কতার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যা অভিভাবকরা কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। ফলে শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার সংরক্ষিত করা যাবে। ধাপ সমূহ হলো-

ধাপ-১. একাউন্ট তৈরি : প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বা ‘অভিভাবক নিয়ন্ত্রিত’ ব্যবস্থা ভিসতার সেট করার আগে সেটিং হতে কন্ট্রোল প্যানেলে গিয়ে প্যারেন্টাল কন্টোল অপশনে ক্লিক করে নতুন একাউন্ট অপশনে ক্লিক করে নতুন ব্যবহারকারীর নাম দিয়ে ‘ক্রিয়েট একাউন্ট’ এ ক্লিক করে, পরে কারেন্ট এনফোর্স সেটিং অন করার মাধ্যমে শিশুদের ব্যবহার মনিটর করা সম্ভব হবে।

ধাপ-২. ওয়েব সাইটে ঢোকা বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ : ভিসতার ওয়েব ফিল্টার অপশনে গিয়ে পূর্বের ব্যবহৃত ওয়েব সাইটসমূহ ইচ্ছামত ফিল্টার করে ব্লক করা যাবে। তাছাড়া যেসবে প্রবেশাধিকার থাকবে বা যেসবে থাকবে না সেসবের লিস্ট করে যথাক্রমে অন ও ব্লক করা যাবে। এটি সহজেই ভিসতা ওয়েব কন্ট্রোলে গিয়ে করা যাবে।

ধাপ-৩. ব্যবহার সময় সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা : ব্যবহারকারীর ব্যবহার সময় সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব যাতে ইচ্ছামত যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে। এর জন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল হতে যে ইউজার একাউন্ট এ সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে সেটিতে ‘টাইম লিমিট’ অপশনে ক্লিক করে ‘ব্লু-বক্সে’ গিয়ে ইচ্ছামত ব্যবহার সময় দিয়ে ক্লিক করে তা সেট করতে হবে ফলে এর বেশি সময় ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারবে না।

ধাপ-৪. গেম খেলায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ : ভিসতায় সহজেই গেম রেটিং করা যায় ফলে ঐসব নির্ধারিত গেমের বাইরে অন্যসব গেম খেলা সম্ভব নয়। ভিসতা সহজেই পিসিতে সংযোজিত সব গেম চিনতে পারে। তাই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল হতে গেমস লিংক এ এসে ইচ্ছামত গেম খেলা বন্ধ বা খেলার অনুমতি দেয়া যাবে, আর একদমই অনুমোদন বন্ধ করতে হলে অলওয়েজ ব্লক বা সর্বদাই বন্ধ অপশনে টিক দিয়ে বন্ধ করতে হবে।

ধাপ-৫. এপ্লিকেশন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা : প্যারেন্টাল কন্ট্রোল বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে যেকোন এপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম ইচ্ছামত বন্ধ বা চালু রাখা সম্ভব। এর জন্য কন্ট্রোল প্যানেল হতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এ এসে অনুমোদন বা ব্লক নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অপশন এ ক্লিক করে সহজেই এপ্লিকেশন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা সম্ভব। তাছাড়া কোন এপ্লিকেশন পিসিতে ব্রাউজের ক্ষেত্রে ব্রাউজ বাটনে ক্লিক করে নির্দিষ্ট এপ্লিকেশন লোকেট করে ক্লিক করলেই তা ব্রাউজ করা সম্ভব।

ধাপ-৬. ডাউনলোড সংরক্ষিত রাখা : ওয়েব সাইটের মতো ফাইল ডাউনলোডেও সংরক্ষণ করা যায়, যাতে আজে বাজে, স্পাম, ভাইরাস সমৃদ্ধ ফাইল সমূহ ডাউনলোড না হয়। এ জন্য ভিসতা ওয়েব ফিল্টার অপশন দিয়ে ফাইল ডাউনলোড অপশন ব্লক করে বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড ব্যবস্থা সংরক্ষিত করা সম্ভব যাতে ঝামেলাপূর্ণ ফাইল সমূহ শিশুদের দ্বারা লোড না হয়।

ধাপ-৭. শিশুদের কার্যক্রম তদারকি করা : পিতামাতার উচিত তাদের শিশুরা ইন্টারনেটে কি করছে বা করতে চাচ্ছে তা প্রত্যহ তদারকি করা। ভিসতায় সহজেই এটি সম্ভব। ব্যবহৃত প্রথম ১০টি ওয়েব সাইটটি চেকসহ এসবের সংক্ষিপ্ত তথ্যাদি ভিসতায় দেখা যায়, ফলে অভিভাবকরা সহজেই বুঝতে পারবে তাদের বাচ্চারা কে কি করছে। এ জন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল হতে ভিউ এ্যক্টিভ রিপোর্ট লিংক-এ ক্লিক করে যেকোন ইউজার একাউন্টের পাশে প্লাস সাইন এ ক্লিক করে একটি ক্যাটাগরিতে ক্লিক করে এর সাব-ক্যাটাগরিতে ক্লিক করে সাইটসহ ক্যাটাগরি সাবক্যাটাগরি এসবও সিলেক্ট করা যাবে ফলে এসবের তথ্যও অভিভাবকরা নিতে পারবে।


অভিভাবকের উচিত হবে পিসি সমূহ এমন স্থানে রাখা যাতে তারা সহজে তা দেখা সহ ব্যবহার করতে পারে। বাচ্চারা যখন পিসি ব্রাউজ করে তখন যতক্ষণ সম্ভব পাশে থাকতে হবে, তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। এমনকি নিজেও বিভিন্ন অপশন ভালভাবে জেনে বা শিখে শিশুদের ভালভাবে ব্যবহারের জন্য সাহায্য করতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চারা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তার একটা লগ বা তালিকা সহ ব্যবহার সময়ও সর্বদা তদারকি করতে হবে। তবে সবই এমনভাবে করতে হবে যেন বাচ্চারা তা টের না পায় বা বিরক্ত না হয়।