ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের পরিচয়জ্ঞাপক সংখ্যা অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ঠিকানাকে ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে ধরা হবে। ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে গঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু! মাইক্রোসফট ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কীভাবে রক্ষা করছে তার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিটি। কমিটির জার্মান সদস্য শুনানিতে বলেন, কাউকে আইপি বা আইপি ঠিকানা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। তাই এটাকে ব্যক্তিগত উপাত্ত হিসেবে ধরতে হবে।


কিন্তু কমিটির সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটিবলছে, আইপি ঠিকানা একটি কম্পিউটারের ঠিকানা অথবা কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে খুব কম ক্ষেত্রেই চিহ্নিত করে। আর অনেক মানুষ একটি কম্পিউটার ও আইপি ঠিকানা ব্যবহার করতে পারে। যেমন সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারগুলো অনেক মানুষ ব্যবহার করে। আইপি ঠিকানাকে ব্যক্তিগত তথ্য হিসেবে ধরা হবে কি না, এর ওপর নির্ভর করছে কীভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলো তথ্য সংরক্ষণ করবে। গুগল দাবি করছে, তারা এখন ব্যবহারকারীর খোঁজ করা তথ্য ১৮ মাসের বেশি সংরক্ষণ করছে না। আর ব্যবহারকারী কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তার তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা ‘কুকিজ’ দুই বছর সংরক্ষণ করেই মুছে ফেলা হচ্ছে।কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, ব্যবহারকারী যত তথ্য সার্চ ইঞ্জিনগুলো জানবে তাদের ব্যবসায়িক মূল্য তত বাড়বে। তাই সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষিত করে রাখবেই।


গুগলের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা উপদেষ্টা পিটার ফ্লিশার দাবি করেন, গুগল আইপি ঠিকানা সংরক্ষণ করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে জানা যায়, ব্যবহারকারীর ভাষা কী বা বিশ্বের কোন প্রান্ত থেকে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন না করেই ব্যবহারকারীকে মূল্যবান তথ্য দেওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ফুটবল’ দিয়ে সার্চ দিলে লন্ডনের ব্যবহারকারীর যে ফলাফল আসবে তা নিউইয়র্কের ব্যবহারকারীর ফলাফল থেকে ভিন্ন হবে (যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুটবল’ বললে ভিন্ন একটি খেলা ‘আমেরিকান ফুটবল’ বোঝায়। আর প্রচলিত ফুটবলকে সেখানে বলা হয় ‘সকার’)।


গুগল আরও দাবি করে, অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতাদের সঠিক বিল দিতেও সার্চ ফলাফল সংরক্ষণ করাটা জরুরি। বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের বিজ্ঞাপনে কয়টি ‘ক্লিক’ পড়ল সে হিসাব করে সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে পয়সা দেয়। এক ব্যক্তি যদি এক বিজ্ঞাপনে অনেকগুলো ক্লিক করে তবে একজনের কাছেই বিজ্ঞাপনটা যায় কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতাকে বেশি অর্থ গুনতে হয়। সেজন্যই আইপি ঠিকানা সংরক্ষণ করা দরকার। মাইক্রোফসট সার্চের সময় ব্যবহারকারী তথ্য সংরক্ষণ করে না। ‘লগ ইন’-এর সময় তারা ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ করে।