মুঠোফোনের কল্যাণে আজকাল ব্লুটুথ শব্দটি কারও কাছে নতুন বলে মনে হয় না। মূলত ব্লুটুথ বা তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে মুঠোফোন থেকে কম্পিউটারে কিংবা আরেকটি মুঠোফোনে বিভিন্ন রকম তথ্য আদান-প্রদান করার কাজেই বেশি ব্যবহার হয়। এ ছাড়া ব্লুটুথ হেডফোন, মাউস, কি-বোর্ড অনেক প্রযুক্তিপ্রেমী আজকাল ব্যবহার করে। কিন্তু তাই বলে ব্লুটুথ পা ? সম্প্রতি হাঁটাচলার কাজেও ব্লুটুথের ব্যবহার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবরের ঘটনা। ৩০ বছর বয়সী মার্কিন ল্যান্স করপোরাল জোশুয়া বেলিল তাঁর পেশাগত কাজে ইরাকের রাস্তায় টহল দিচ্ছেন হামভি জিপে চড়ে। রাস্তায় পেতে রাখা বোমার হঠাৎ বিস্কোরণে জখম হয়ে দুটো পা কেটে ফেলতে হয় হাঁটুর ওপর থেকে। ইরাক থেকে তাঁকে ফেরত নিয়ে আসা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সংযোজন করা হয় কৃত্রিম দুটো পা। এই পা দুটোয় আরও যুক্ত করা হয়েছে কম্পিউটার চিপ। এই চিপ থেকে ব্লুটুথ প্রযুক্তির সংকেত প্রেরণ করা হয় দেহের সঙ্গে যুক্ত মোটরে। এই মোটরের ফলে বেলিলের কৃত্রিম পা দুটোর গোড়ালি এবং হাঁটুর মাঝে চলার সময় সাবলীলতা বজায় থাকে। কৃত্রিম পায়ের মাঝে বিদ্যমান ব্লুটুথ গ্রাহকযন্ত্র দুটো স্থাপন করা হয়েছে গোড়ালির কাছে। দুটো গ্রাহকযন্ত্রই আলাদাভাবে নির্ণয় করতে পারে অপর পায়ের চলাফেরা, ভঙ্গি। এমনকি সিঁড়ি বেয়ে চলা, হাঁটা, কোনো কিছুর ওপর ওঠার সময় পর্যন্ত ! বেলিল জানান, ‘এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন সর্বাধুনিক, তেমনি অসাধারণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি উরুর পেশিতে চাপ দিই আস্তে হাঁটার জন্য, তখন সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম পা দুটোও হাঁটার গতি সুন্দরভাবে কমাতে থাকে।’এর আগে প্রচলিত কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম পাগুলোকে বিভিন্ন প্রোগামিং ভাষার সহায়তায় চালানো হতো। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে একটি ল্যাপটপের সঙ্গে একগাদা তারও বহন করতে হতো। কারণ, পাগুলোকে তারবিহীন প্রযুক্তির আওতায় আনা সম্ভব ছিল না। ব্লুটুথ পায়ের কল্যাণে বেলিল হাঁটতে পারবেন অনেক দুর কোনো রকম ক্লান্তি ছাড়াই। বেলিল নিজেও স্বীকার করেন এই প্রযুক্তি পায়ের ফলে তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া, এমনকি লাঠির সাহায্য ছাড়াই চলতে পারেন অক্লেশে।ব্লুটুথ পায়ের নানা রকম সুবিধার সঙ্গে বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। এর ব্যবহারকারীরা বলেন, মাঝে মাঝে কোনো কিছুতে কতটা জোরে পা ফেলতে হবে সেটা যন্ত্র অনেক সময় অনুধাবন করতে পারে না। তা ছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো, একে চার্জ করার বিষয়টি। মুঠোফোনের মতো করে এই পা দুটোর ব্যাটারিকে প্রতিদিন রাতে চার্জ করতে হয় পরের দিন সচল রাখার জন্য।বেলিল অবশ্য একাই এই ব্লুটুথ পায়ের প্রথম মালিক হিসেবে দাবি করতে পারছেন না। মার্কিন সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল গ্রেগরি গ্যাডসন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন একই সঙ্গে। তবে, গ্যাডসন ও বেলিল দুজনেই আশাবাদী এ ধরনের প্রযুক্তি দিয়ে তাঁরা একাধারে যেমন হাঁটার সুচনা করেছেন, তেমনি অন্যান্য বিকলাঙ্গ মানুষের চলার জন্য একটি নতুন পথ সৃষ্টি করেছেন। সিএনএন অবলম্বনে