ভবিষ্যতের কম্পিউটারের কথা কল্পনা করলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কথাই মাথায় আসে সবার আগে। এই কম্পিউটার বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, যার মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা যাবে সহজেই। তবে এসব ধারণা এখন পর্যন্ত গবেষণাগারের চার দেয়ালের মধ্যেই রয়ে গেছে। সম্প্রতি আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক প্রেম কুমার এবং তাঁর দল কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ধারণাকে আরও বাস্তব রূপ দিয়েছেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে সমান্তরালকম্পিউটারও বলা হয়ে থাকে। তাঁদের গবেষণাপত্রে তাঁরা দেখিয়েছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির মৌলিক অংশ কোয়ান্টাম লজিক গেট তৈরি করা সম্ভব। এ লজিক গেটকে একটি ইলেক্ট্রনিক সার্কিটে বসানো হলে, এটি একটি অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে কয়েক শ কিলোমিটার দুরের অপর একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। লজিক গেট হলো একটি মৌলিক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র, যা বিভিন্ন গাণিতিক তথ্য নিয়ে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে একটি নট গেট তৈরি করা হয়েছে, যাতে ‘১’ ইনপুট হিসেবে দেওয়া হলে ‘০’ আউটপুট দেখায় এবং ‘০’ ইনপুট হিসেবে দেওয়া হলে ‘১’ আউটপুট দেখায়। নতুন তৈরি এ লজিক গেটে ফাইবার অপটিক তারের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। এ কাজটি আগে হতো লেজার রশ্মির মাধ্যমে। আশার বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে ব্যবহূত এ লজিক গেট একেবারেই বাস্তবসম্মত। এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম ইন্টারনেটব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব। এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এখনকার চেয়ে অনেক সুরক্ষিত দ্রুতগতির ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস (আইবিএম) করপোরেশন এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা অনেক দিন ধরেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ওপর গবেষণা করে আসছেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ধারণা আসে প্রথম ১৯৮০ সালে। এই ধারণা তৈরি হয়েছে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। সাধারণত প্রচলিত কম্পিউটারগুলো বাইনারি সংখ্যা ‘১’ ও ‘০’ ব্যবহার করে এবং এগুলো বিট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসাব করে কিউবিটের মাধ্যমে, যা একই সাথে ‘০’ ও ‘১’ লজিক ব্যবহার করে একটি কোয়ান্টাম অবস্থা তৈরি করে। যেহেতু কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সঙ্গে দুটি লজিক ব্যবহার করে কাজ করতে পারে, ফলে মাত্র কয়েক শ কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমানের সুপার কম্পিউটারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। কুমারের এ পরীক্ষার জন্য যে ধরনের ফোটন তৈরি করতে হবে, সেগুলোর কিউবিটগুলো বিজড়িত অবস্থায় থাকবে। ফলে একটি ফোটনের মেরু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনাআপনি বাকিগুলোর অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এতে ফোটনগুলো একটি দিকে ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে ফাইবার অপটিকসের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এর মাধ্যমে দুটি ছোট আকারের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, ফাইবারের মাধ্যমে বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম ইন্টারনেট তৈরিতে চালকশক্তি হিসেবে কাজ করবে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতের এ কম্পিউটার আমরা আমাদের বাসায় ব্যবহার করতে পারব, নাকি এটা শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ থাকবে।