জমকালো ফ্যাশন শো’র মূল আকর্ষণ ছিল মহিলা রোবট। মেয়েদের অবয়বের রোবটটি যে দর্শক মাতালো জাপানের টিসুকুবার এক ফ্যাশন শো’তে তাতে দ্বিধান্দ্বিত নয় কেউই। কারণ চমৎকার কোমর দুলানি আর সদা হাস্যোজ্জ্বল মহিলা রোবটটি দেখালো তার গতিময়তার এক উত্তাল রূপ। মহিলা রোবটটির প্রতি কদমেই বুঝা যাচ্ছিল কতটা জীবন্ত রূপ দিয়েছে এর বিজ্ঞানীরা। চমৎকার এই আবিষ্কার যে আরো একধাপ এগিয়ে নিল পুরো পৃথিবীকে সেটা বলাই যায়। পূর্বের আবিস্কৃত রোবটের চেয়ে এর গতিময়তায় শো’তে উপস্খিত সকল দর্শকই ছিল বিমুগ্ধ। অনেকেই হয়ত ভাবছেন এটা বোধহয় রোবটের ফ্যাশন শো ছিল। না তা কিন্তু নয় এটি মূলত মডেলদের দ্বারা পোশাক প্রদর্শনের ফ্যাশন শো ছিল। অনেক দর্শকই প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে এটা একটি রোবট ছিল। চোখ ধাঁধানো অববয় আর পরিপাটি পোশাক পরিচ্ছদে দারুণ মানিয়েছিল রোবটটিকে। জাপানে যারা নিয়মিত ফ্যাশন শো’র দর্শক তারা প্রথমে ভেবেছিল এই নতুন মেয়ে কবে এলো ফ্যাশন শো জগতে। তবে তারাসহ সকল দর্শকই হতবিহ্বল হয়ে যায় যখন তারা শুনলো ঐ সুন্দর ও পরিপাটি পোশাকের মেয়েটি একটি রোবট। পুরো হলরুমই তখন ছোটছোট গুঞ্জন আর হাসি কান্নার রোল পড়ে যায়। যারা কান্না করছিল তাদের অভিমত ছিল এমন, ‘কিভাবে একটি রোবটকে এতো জীবন্ত করা সম্ভব।’ সেই সাথে তারা এই রোবট আবিষ্কারদের ধন্যবাদও দেন। রোবটির কৃতকর্মের কথা বলা হলো চলুন এবার আমরা এর আবিষ্কারের পিছনের কিছু কথা জানি।
জাপান সরকারের অর্ধ পৃ‘পোষকতায় চালিত দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানিরা তৈরি করে এই রোবটটি। তারা এই রোবটটি আবিষ্কারের কথা বলতে গিয়ে এক ডেভেলপার বলেন, ‘প্রথমে আমরা এর নাম ঠিক করি সাইবার নেটিক হিউম্যান। মূলত রুহ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ একটি মানুষ তৈরি করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। তার প্রথম কাজটি করতে পেরেছি বলে আমরা খুশি। ৯৫ পাউন্ডের ৪৩ কেজি ওজনের রোবটটির তার যথাযথ কর্মটি করতে পেরেছে। আর সফল সমাপ্তির জন্য ধন্যবাদ বিধাতাকে।’ তবে এই রোবটটির অন্য আরেকজন তৈরিকারক হিরোহিসা হিরোকায়ার মত একটু ভিন্ন। সে মনে করছে প্রযুক্তির বিচারে এর আরো কিছু কাজ বাকী আছে। প্রযুক্তিগতভাবে সাইবারনেটিক হিউম্যান পর্যায়ে যেতে রোবটটির আরো কিছু উন্নতি দরকার। ফ্যাশন শো প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের অবশ্য মত হচ্ছে এর প্রায় সব দিকই উন্নত ছিল তবে এর উচ্চতা আরো একটু বেশি হওয়া প্রয়োজন। সাইবারনেটিক হিউম্যানের পরবর্তী রোবটটি হচ্ছে ৫৮ কেজি (১২৪ পাউন্ড) ওজনের এইচআর পি-৪সি। রোবটটি হবে কালোকেশি আর উচ্চতা হবে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। সাইবারনেটিক হিউম্যান ডেভেলপাররা মনে করছে পরবর্তী রোবটটি পুরো মাত্রায় দর্শকের আনন্দ দিতে পারবে। রোবট ডেভেলপারদের মতে কৌতুক প্রদর্শন, ব্যায়াম শিক্ষক ও খেলার মাঠের নৃত্যরত মডেলের কাজে রোবটটি ব্যবহার করা যাবে। মূলত এইচআরপি-৪ সিকে জাপানের নারীদের গড় উচ্চতা বিবেচনায় তৈরি করা হয়। রোবটটি আগামীতে টোকিও ফ্যাশন শো’তে প্রদর্শন করা হবে। তবে এই শো’তে রোবটটিকে নগ্নভাবে ফ্যাশন শো’তে প্রদর্শিত হবে। বর্তমানে রোবটটি বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। রোবটটির মূল্য ২০ মিলিয়ন ইয়েন যা ডলারে ২ লক্ষ। এই রোবটটির আবিষ্কারক বলেছেন কোন প্রকার মুখের আকৃতি ছাড়াই ২ লক্ষ ডলার বা ২০ মিলিয়ন ইয়েন দরে রোবট বিক্রয় করা হবে। আর এই রোবটকে অদূর ভবিষ্যতে স্খানীয়ভাবে বাজারজাত করা হবে।
জাপান বরাবরই রোবট তৈরিতে এগিয়ে। আর সেজন্য তারা পুরো পৃথিবীতেই গর্ব করে। নিত্যনতুন রোবট তৈরিতে তারা প্রচুর প্রেষণা দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। জাপান রোবট তৈরি ক্ষেত্রে আরো সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করছে। আর উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন সব রোবট। খুবই সম্প্রতি জাপানের আরো একটি কোম্পানি নতুন একটি রোবট তৈরি করছে। অটোমেকার হোন্ডা মটর কোম্পানির আশিমো নামে আরো একটি রোবট তৈরি করেছে। যা সাইবারনেটিক হিউম্যানের মতো চলতে ফিরতে ও কথা বলতে পারে। তবে এই রোবটটি মানুষের মত দেখতে না। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও এমন একটি রোবট তৈরি করেছে। এছাড়া ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও সাইবারনেটিক হিউম্যানের মত করে নতুন দুটি রোবট তৈরি করেছে। প্রত্যেকটি রোবট দেখতে মানুষের মত এবং রোবটগুলো রিসিপসনিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবে। বর্তমানে জাপানে আরো একটি রোবট আবিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা মূলত বৃদ্ধ ও অসুস্খ রোগীর সেবায় নিয়োজিত করা যাবে। জাপানের ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান উহিহিরো কাগা বললেন, ‘আমরা এই ক্ষেত্রকে শ্রমশিল্প খাত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর তা সম্ভব হবে খুব শীঘ্রই।’
সাইবারনেটিক হিউম্যানের এইচআরপি-৪সি রোবটে মূলত ৩০টি মটর বসানো আছে। যার প্রত্যেকটির একের ধরনের কাজ। মটরগুলো মূলত হাত-পা নড়াচড়া করা আর হাসি, রাগ ও বিýময় প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এইচআরপি-৪সি’র মত করে নতুন আরেকটি রোবট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চমৎকার মহিলা কণ্ঠ দ্বারা তৈরিকৃত রোবটটি যখন দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলবে ‘হ্যালো এভরিওয়ান’। তখন রোবটটির মুখ নড়াচড়া করবে। অন্যদিকে কথার তালে তালে চোখও মিটমিট করবে। আর হাটার ছলে ছোট বিটের কোমর দুলাতে দুলাতে দর্শকদের মন মাতাবে। বিজ্ঞানীরা এখন উঠে পড়ে লেগেছে তৈরি করা হবে উপস্খাপিকা রোবট। যে উপস্খাপন করতে পারবে পুরো একটি অনুষ্ঠান। উপস্খাপিকা রোবটটি হবে চমৎকার মুখের অধিকারিনী আর বাচনভঙ্গির তালে তালে চলবে ঠোঁট নাড়ানো আর মুখের অবয়বের নানাবিধ পরিবর্তন। চমৎকার হাসি, অভিমানী আর চমক এই তিলের মিশেল দিয়ে তৈরি হবে উপস্খাপিকা রোবট। আগামীর আবিষ্কার বাদ দিয়ে আবারো ফিরে যাই সাইবারনেটিক হিউম্যানের কথায়। সামনেই প্যারিসের একটি ফ্যাশন শো’তে অংশগ্রহণের জন্য যাবে এইচআরপি-৪সি। সেজন্য এইচআরপি-৪ সি’র কিছু পরিবর্তন আনা হবে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘বাকা ঠ্যাঙ সোজা করা।’ মানে এইচআরপি-৪ সি’র হাঁটুর বক্র অংশটিকে আরো উন্নত করা হবে। যাতে বাকা অংশটি বুঝা না যায়। আসলে মানুষ মডেলের সাথে তাল মেলাতেই এইচআরপি-৪সি’র হাঁটুর অংশটিকে প্রদর্শন করা হবে। হিউমা নয়িড রিসার্স গ্রুপের প্রধান সুজি কাজিটা বলেন, ‘এইচআরপি-৪সি এর হাঁটুর নিচের অংশটিকে আরো একটু প্রশস্ত করা দরকার। তবে যাই হোক ধন্যবাদ সাইবারনেটিক হিউম্যান ডেভেলপারদের সেই সাথে দোয়া করছি তাদের সাফল্যের জন্য।’ সুজি কাজিটার মত আমরাও বলছি এইচআরপি-৪সি’র মত এমন আরও অভিনব রোবট তৈরি হোক। আর এগিয়ে যাক আমাদের বিশ্ব আরো একধাপ।
সৌজন্যে : মাসকি ই-বিজ