প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৃথিবী আজ এক নতুন উচ্চতায়। প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিস্কারের সাথে সাথে বিশ্ব এখন অনেক সহজ। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ এর বিস্ময়কর ১০ প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের এবারের প্রতিবেদন- লিখেছেন খালেকুজ্জামান সম্রাট

প্রতি বছরই সারা বিশ্বের সর্বাধুনিক সেরা ১০ প্রযুক্তি খুঁজে বের করা হয়। তেমনিভাবে ২০০৯ এর ১০ বিýময়কর প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বুদ্ধিমান সফটওয়্যার সহকারী, বায়োলজিক্যাল মেশিন ইত্যাদি। প্রত্যেকটি বুদ্ধিমত্তা সহকারী একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সাহায্য করবে। অন্যদিকে বায়োলজিক্যাল মেশিন উদ্ধার কাজে সহায়তা করবে।

১. সিরি (ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার এসিসটেন্ট)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এক অভিনব সফটওয়্যার তৈরি করেছেন সিলিকন ভ্যালীর বিজ্ঞানী এডাম চিয়ার। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজাখুজি করে। এডাম চিয়ারের এই নতুন আবিস্কার তাদের জন্য আর্শীবাদ হতে পারে। কেননা এডামের এই আবিস্কারটি সার্চ ইঞ্জিনের চেয়ে আরো একধাপ এগিয়ে। কারণ এর নিত্যনতুন সব ফিচার আর চমৎকার সব কার্যকলাপই একে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখবে। এডাম চিয়ার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারটির নাম দিয়েছেন সিরি। সিরি মূলত ব্যক্তিগত সহকারী এই সফটওয়্যারটি একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। সফটওয়্যারটি অত্যন্ত ব্যবহার উপযোগী ও সুবিধাজনক। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ কার্যক্রমের সূত্র ধরেই মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি চৌকষ দল ক্যালো নামের একটি বিশেষ কার্যক্রম শুরু করে। এডামসহ স্রি ইন্টারন্যাশনালের কিছু বিশেষজ্ঞ তাদের এই কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। তারপর এডাম চিয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এই সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নেয়। এডাম চিয়ার ও ক্যালোর প্রজেক্ট প্রধান মিলে সর্ব প্রথম এই সফটওয়্যার তৈরির কথা মাথায় আনেন। তারা প্রথমে চিন্তা করেন কিভাবে তাদের এই কার্যক্রমকে সফল করা যায়? কারণ তারা চাচ্ছিল সফলতার সহিত তাদের কার্যক্রম শেষ করতে। সেই অনুযায়ী তারা গ্রাহক সেবার কথা চিন্তা করে উপাত্ত সংগ্রহের কাজে নেমে যায়। তারা ধীরে ধীরে সংগ্রহ করতে থাকে গ্রাহকে চাহিদা মোতাবেক নানাবিধ তথ্য।

এডাম চিয়ারের তৈরিকৃত সফটওয়্যারটির প্রথম নাম ছিল ভার্চুয়াল পারসোনাল এসিসটেন্ট। প্রথমে এই সফটওয়্যারটিকে স্রি ইন্টারন্যাশনাল থেকে সনদপত্র দেয়া হয়। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি তার সঠিক কাজটি করতে পারেনি। ফলে থেমে যায় এর অগ্রগতি। তবে এডাম নিজ উদ্যোগে এই সফটওয়্যারটির উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। ফলশ্রুতিতে সফটওয়্যারটি ২০০৯ এর প্রথম দিকে আবার তার কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এডামের তৈরিকৃত সফটওয়্যারটি বেশ কার্যকর ফলাফল প্রকাশে সমর্থ হয়েছে। পূর্বের ভার্চুয়াল পারসোনাল এসিসটেন্ট থেকে বর্তমানের ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার এসিসটেন্টে প্রচুর পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানের সফটওয়্যারটিতে নতুন কিছু ফিচারও সংযোগ করা হয়েছে। এই সফটওয়্যারটি মূলত ফ্লাইটের টাইম শিডিউল, হোটেল টিকেট বুকিং ও পুরো সপ্তাহের পরিকল্পনা প্রণয়ণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।

সবার মনেই প্রশ্ন জাগছে কিভাবে হবে উপরে বর্ণিত কাজগুলো? প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় ‘ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার এসিসটেন্ট’ ব্যবহারকারী মৌখিক বা কিবোর্ডের মাধ্যমে এই সফটওয়্যারকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য উপস্খাপন করবে। এরপর সফটওয়্যারটি আপনাআপনি কিছু উত্তর ব্যবহারকারীর জন্য স্ক্রীনে উপস্খাপন করবে। তবে প্রত্যেকটি ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যারই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। নাহ! এবারও ব্যাপরটা পরিস্কার হয়নি, তাই না? চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটাকে আরো পরিস্কারভাবে বোঝার চেষ্টা করি। ধরুন আপনি আমেরিকাতে গিয়েছেন। কিন্তু আমেরিকার কোন হোটেল সবচেয়ে ভাল আপনি জানেন না অথবা আপনার একটি নির্দিষ্ট বাজেট আছে হোটেলে থাকার জন্য। তারজন্য কয়েকটি হোটেলের তথ্য আপনার দরকার। তথ্যগুলো হাতে পাবার পরই আপনি একটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারবেন। আর সিদ্ধান্ত নিতে হলে নিশ্চয়ই আবাসিক হোটেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখার সময়ও আপনার নেই। সেজন্য আপনি গুগল কিংবা ইয়াহুতে সার্চ দিয়ে দেখবেন। কয়েকটি হোটেলের তথ্য সংগ্রহ করবেন। তারপর আপনি বাছাই করবেন কোন হোটেলটি আপনার পছন্দসই। যা বেশ সময়ের ব্যাপার। তবে আপনার হাতের কাছে যদি ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার এসিসটেন্ট থাকে তবে খুব সহজেই আপনি এই পছন্দ করার কাজটিকে করতে পারবেন। আর সেটা শুধুমাত্র একটি বাক্য বলা বা লেখার মাধ্যমে। অন্যদিকে ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার এসিসটেন্ট সপ্তাহের পূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়ণে বেশ সহায়ক হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি একজন ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহারকারী। আর সফটওয়্যারটিতে আপনার পূর্ব কাজের ধরণসহ নানারকম তথ্য এই সফটওয়্যারটিতে সংরক্ষণ করা আছে। যেমন- আপনার ভৌগোলিক অবস্খান, আপনার বাসস্খান এলাকার নাম ইত্যাদি। এবার আপনি চাচ্ছেন সামনের সপ্তাহের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ণ করতে। তার জন্য আপনি ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যারকে বিনোদন ও ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রশ্ন করলেন। সম্ভাব্য সঠিক উত্তর দিয়ে ইন্টিলিজেন্ট সফটওয়্যারটি আপনাকে সহায়তা করবে।

২. বায়োন্যানোম্যাট্রিক্স (ডিএনএ সিকোয়েন্স পরিমাপক)
উপরিভাগে রঙীন ফিতা আর অপরপ্রান্তের কোণার দিকে একটি ছোট ল্যাব এবং দরজা ব করা একটি অংশ। ভাবছেন এটা আবার কি? ভাবনার দরকার নেই এটি অতি ক্ষুদ্রাকায় একটি ডিএনএ চিপ। বায়োন্যানোম্যাট্রিক্স(জেনোম) আসলে এমন একটি পরিমাপক যেটি সুচারু রূপে একজন মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা করবে। শুধু তাই নয় এটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কত টাকা খরচ হলো তারও একটি হিসেব দিবে। অভিনব এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা করতে ৮ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১০০ ডলার খরচ পড়বে। প্রযুক্তিটি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আর খুব কম খরচে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল দিবে। সেইসাথে এটি রোগীর জেনেটিক প্রোফাইল তৈরি করতে সহায়তা করবে। অনেক বিশেষজ্ঞরাই অবশ্য এর সমালোচনা করছে। সমালোচনার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে এর ব্যয় খরচ। তবে বায়োন্যানোম্যাট্রিক্স বিজ্ঞানী হ্যান চাও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন ভবিষ্যতে এর খরচ কমে যাবে আর তখন এটি সকলের চাহিদার তালিকায় চলে আসবে। বায়োন্যানোম্যাট্রিক্স চিপটির মাধ্যমে একজন ডাক্তার খুব সহজেই রোগীর ক্যান্সার আছে কিনা তা উদঘাটন করতে পারবে। শুধু ক্যান্সার উদঘাটন নয় এই চিপটির দ্বারা দেহের প্রত্যেকটি ডিএনএ’র পারস্পারিক সম্পর্ক নির্ণয় করা যাবে। চিপ ব্যবহারকারী একজন ডাক্তার রোগীর রোগের পূর্বাভাস দেখেই রোগীর জন্য পথ্য দিতে পারবেন। এমন সব সুবিধা দেয়া এই চিপটির খরচ কিন্তু সত্যিই কম। কারণ এক্স করার চেয়ে কম খরচে এই চিপ দ্বারা চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। ডাক্তার মূলত মানব দেহের বিভিন্ন প্রকার জেনেটিক পরিবর্তনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে রোগের পূর্বাভাস সম্পর্কে রোগীকে জানাতে পারবে। ডিএনএ পরীক্ষার সময় মানবদেহের ক্রোমোজমগুলোকে মিলিয়ন মিলিয়ন ছোট ছোট টুকরা করা হয়। ফলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষে এই ক্রোমেজমগুলোকে সঠিকভাবে সাজানো সম্ভব হয়না। ফলে ক্রোমোজমগুলোকে দেখার ক্ষেত্রে একটু সমস্যার সৃষ্টি হবে। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাপারটি হবে একটু সময় সাপেক্ষ। কারণ যখন একই রকম ক্রোমোজমগুলো পাশাপাশি থাকবে তখন ক্রোমোজমগুলোকে বারবার গণন করার প্রয়োজন পড়তে পারে। আর তা করতে না চাইলে একটি কাল্পনিক হিসাব দিতে হবে ডিএনএ পরীক্ষকদের। ফলে সঠিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও একপা পিছিয়ে থাকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। আর ডিএনএ পরীক্ষার এই সমস্যার কথা বিবেচনা করেই হ্যান চাও তার এই অবিনভ চিপটি আবিস্কার করে। তবে হ্যান চাওয়ের তৈরি করা চিপটি সচল ও পরিত্যক্ত ডিএনএগুলোর ক্রমাìðয় অবস্খানকে নির্দেশ করবে। আর প্রত্যেকটি সারিতে সর্বনিম্ন ১০০ থেকে ১০০০ ক্রোমোজমের সমìðয়ে একটি লাইন তৈরি হবে। ফলে রোগ নির্ণয় করা হবে অনেক সহজ ও নির্ভুল।

৩. মেমরি চিপ (রেসট্র্যাক মেমরি)
আইবিএম ২০০২ সালে যখন তাদের হার্ড-ড্রাইভের ব্যবসা হিটাসির কাছে বিক্রয় করে তখন স্টুয়ার্ট পারকিন বিýিমত হয়েছিল। বিýময়ের কারণ হচ্ছে আইবিএম’র মত প্রতিষ্ঠান, কি করে সম্ভব? অতিক্ষুদ্রাকায় মেমরি চিপ তৈরি করে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে স্টুয়ার্ট পারকিন। স্টুয়ার্ট পারকিন আইবিএম’র একজন সহকারী কর্মকর্তা। কর্মজীবনে সে চুম্বকীয় মৌলিক ধাতু নিয়ে নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়। তার আবিস্কারের ধারাবাহিকতায় তিনি প্রতি বারই অধিক ক্ষমতা ও অধিক জায়গা সম্বলিত হার্ডডিস্ক আবিস্কার করেন। সেই ধারায় তিনি আবিস্কার করেন অতি উচ্চ ধারণ ক্ষমতার ফ্ল্যাশ মেমরি চিপ। তারই দারাবাহিকতায় এবার আবিস্কার করলেন রেসট্রেক মেমরি চিপ। তার আবিস্কৃত ফ্ল্যাশ মেমরি চিপ সম্পর্কে সকলেই কমবেশি জানেন। ফ্ল্যাশ মেমরি চিপ মূলত চুম্বকীয় হার্ডডিস্ক ড্রাইভের চাইতে আরো একধাপ এগিয়ে। ফ্ল্যাশ মেমরির স্খায়িত্ব হার্ড ডিস্কের চেয়ে অনেক বেশি। ফ্ল্যাশ মেমরি ডিস্কের দুইদিক থেকেই কাজ করতে পারে। পারকিন তার এই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে বলেন এটি উপাত্ত সংরক্ষণের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পূর্বের ফ্ল্যাশ মেমরি ও চুম্বকীয় ডিস্ক ড্রাইভ উভয়ই দ্বি-মাত্রিক সুবিধা নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ত্রি-মাত্রিক সুবিধা নিয়ে তৈরি হলো রেসট্রেক মেমরি। গত ৫০ বছর দ্বি-মাত্রিক স্টোরেজ যন্ত্রগুলো সারা বিশ্ব দাপিয়ে চললেও আগামীর বিশ্বে ত্রি-মাত্রিক সুবিধার রেসট্রেক মেমরি যে এক চেটিয়া ব্যবসা করবে তার পূর্বাভাস পাওয়াই যাচ্ছে।

ইংরেজি ইউ আকৃতির ক্ষুদ্র তারগুলো খাড়াভাবে রেসট্রেক মেমরি চিপে বসানো হবে। যা দেখতে অনেকটাই বনের এলোপাথারি গাছগুলোর মত দেখাবে। ক্ষুদ্র তারের প্রত্যেকটি অংশই এক একটি অঞ্চল বলে বিবেচিত হবে। চিপের অঞ্চলগুলোর সীমানা প্রকাশের জন্য ১(ওয়ান)এস ও ০(জিরো)এস ব্যবহার করা হবে। যখন চিপের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে তখন প্রত্যেকটি তারই স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠবে। সেইসাথে চিপের মধ্যে অবস্খিত প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি স্খানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করবে। আসলে চিপের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহের পুরো ব্যাপারটা দেখতে অনেকটাই প্রতিযোগিতায় অংশ করা কার ও রেসট্রেকের মত হবে। ২০০৩ সালে প্রথম যখন পারকিন রেসট্রেক মেমরির কথা সকলের সামনে উথাপন করেন তখন লোকজন চিন্তা করেছিল এই অসম কল্পনাই সাড় বাস্তবায়ণ সম্ভব নয়। কিন্তু গত বছরের এপ্রিলে সবাইকে চমকে দিয়ে পারকিন রেসট্রেক মেমরির সফল প্রদর্শন শেষ করে। পারকিন তার উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রকাশ করে যে, তার আবিস্কৃত রেসট্রেক মেমরিটি চুম্বকের আদর্শকে বজায় রেখে সঠিক বিদ্যুতের সরবরাহ করতে পারে। তবে পারকিন তার এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র সায়েন্স পত্রিকার কয়েকজন পরিদর্শককে দেখিয়েছিল এবং সায়েন্স পত্রিকা তার এই প্রযুক্তিটি নিয়ে পুরো বিস্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ২০০৯ এ এই প্রযুক্তিটি বাজারে আসে। সেই বিষয়ে পারকিন বলেছেন ‘রেসট্রেক মেমরির চাহিদা এতটাই বৃদ্ধি পাবে যে, পূর্বের সকল হার্ডডিস্ক ও ফ্ল্যাশ মেমরি চিপের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’

৪. সাইবরগ ডিভাইস (বায়োলজিক্যাল মেশিন)
আমরা প্রায়ই ফুলের গুচ্ছে মৌমাছি, ছারপোকা, ফড়িং বা অন্য অনেক ধরণের পতঙ্গের আসা যাওয়া দেখি। সকল পতঙ্গই ফুলের গে বারবার দিক পরিবর্তন করে কখনো বামে কখনো ডানে কখনো উপরে আবার কখনো বা নিচে উড়াউড়ি করে। এইসব পতঙ্গের আদলে ছারপোকা আবিস্কার করলেন ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাহারবিজ। কি চমকে গেলেন? না জীবন্ত কোন ছারপোকা নয়। প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করতে মাহারবিজের এই আবিস্কার সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মনে মনে হয়ত ভাবছেন অনেকেই। কি হবে কৃত্রিম এই ছারপোকা দিয়ে? তারহীন ছারপোকাটি একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস। ছারপোকাটির মস্তিস্ক ও পাখায় বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনের মাধ্যমে সচল করা হবে। যেকোন ব্যক্তি খুব সহজেই এই ছারপোকাটি (সাইবরগ ডিভাইস) ব্যবহার করতে পারবে। মন চাইলেই কেউ একে ব করতে পারবে, চালু করতে পারবে আবার মধ্য পথে গিয়ে স্খির করেও রাখতে পারবে। ব্যাপারটা পরিস্কার হয়নি, তাই না? মূলত মাহারবিজের এই আবিস্কার উদ্ধার কর্ম ও খোঁজাখুজির কাজে ব্যবহার করা যাবে। মাহারবিজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সাইবরগ ডিভাইসটি যে কেউ মাত্র ৫ ডলার ব্যয়ে ক্রয় করতে পারবে। তবে মূল্য কম হলেও এর প্রয়োজনের দিক চিন্তা করে এর গুরুত্ব অবশ্যই অনেক বেশি। সাইবরগ অতি উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেও তার খোজাখুজির কাজ অব্যাহত রাখতে পারবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে হঠাৎ সংঘটিত অগ্নিকান্ডের ফলে সেই গৃহে বা দালানে আটকে পড়া কোন লোক জীবিত আছে কিনা তা জানার জন্য আপনি মাহারবিজের এই অভিনব উদ্ভাবনটিকে অবশ্যই বাহবা দিতে পারেন। আরো একটি উদাহরণ দেয়া যাক ধরুন নির্মিত একটি ভবন ধসে পড়েছে। আপনি সঠিকভাবে আসলে কোন প্রকার সংখ্যাই নিরূপণ করতে পারছেন না যে কতজন লোক ভবনে ছিল। আর কেউ জীবিত আছে কিনা। জীবিত থাকলে কোন জায়গায় তার অবস্খান। যেখানে মানুষের যাবার মত কোন অবস্খা নেই। আর প্রত্যেকটি স্খানের দালান সরাতে সরাতে অনেক জীবিত ব্যক্তিই হয়ত মারা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ছারপোকা যে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে তা বলাই বাহুল্য। কেননা ছারপোকাটি (সাইবারগ ডিভাইস) খুজে বের করবে কোথায় কোথায় আসলে মানুষ আছে আর থাকলে সে জীবিত না মৃত তা নিরূপণ করবে। তদানুযায়ি উদ্ধার কাজ চালিয়ে গেলে হয়ত অনেক লোককেই বাচানো সম্ভব হবে।

অসাধারণ এই প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে মাহারবিজ বলেন ‘পুরো সাইবারগ ডিভাইসটিকে মূলত জীবন্ত মানুষকে নির্দেশ করার মত করে তৈরি করা হয়েছে।’

৫. রোগ নির্ণয় করবে পেপার ডায়াগনসটিকস
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ হোয়াইটসাইড আবিস্কার করলেন পেপার ডায়াগনসটিকস চিপ। ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে জর্জ হোয়াইটসাইডের আবিস্কৃত পেপার ডায়াগনসটিকস। পেপার চিপটি মূলত রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহের নতুন রোগ ও পুরাতন রোগ সম্পর্কে পুরো বিস্তর তথ্য প্রকাশ করবে। চতুর্ভুজ আকৃতির চিপটি দেখতে অনেকটা পোস্টাল স্ট্যাম্পের মত। ইউরিনের নমুনা খুবই কম সময়ে আর অল্প খরচে সঠিক রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে। চিপটির চারকোণায় ইউরিনের নমুনা বা রক্তকণার নমুনা নিয়েই মূল পরীক্ষার কাজ করতে হবে। পেপার চিপটিতে ইউরিন অথবা রক্তকণা স্খাপন করতে হবে। পেপার চিপটিতে ইউরিন অথবা রক্তকণা স্খাপনের পরই আসলে বোঝা যাবে লাল, হলুদ, নীল ও সবুজ রঙের খেলা। আর রঙের খেলার মূল কারণ হবে রক্তকণা বা ইউরিনের রাসায়নিক বিক্রিয়া। বিক্রিয়ার উপরই নির্ভর করবে রক্ত বা ইউরিন পরীক্ষার ফলাফল। বিশেষজ্ঞরা চিপটির মাধ্যমে খুব সহজেই রক্ত বা ইউরিনের উৎপত্তি স্খল নিরূপণ করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষার সময় কালো মার্কার দিয়ে ইউরিন কিংবা রক্তের উৎপত্তি স্খলকে নির্দেশ করতে পারবে।

যদিও অন্ত:সত্ত্বা পরীক্ষার জন্য পেপার ডায়াগনসটিকস প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তারপরও নতুন এই আবিস্কারের বিশেষত্ত্ব কি? সবার মনেই এই প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। জর্জ হোয়াইটসাইডের আবিস্কৃত পেপার ডায়াগনসটিকস সম্পর্কে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক এলবার্ট ফ্লোচ বলেন ‘চমৎকার একটি আবিস্কার উপহার দিল জর্জ। ওকে ধন্যবাদ। আমি আবিস্কারটির আদ্যোপান্ত খতিয়ে দেখেছি। সত্যিই পেপার ডায়াগনসটিকস চিপ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করল। পেপার চিপটি একাধারে রক্তকণা বা ইউরিনের চলাচলকে ছবির মত দেখাবে। অন্যদিকে ছোট ছোট ফাঁকগুলোকেও অতি সূক্ষ্মতার সাথে প্রকাশ করবে।’

খুবই সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা আরো একটি পেপার চিপ তৈরি করেছে। যা ত্রি-মাত্রিক গঠন ও পানিরোধক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফিতার সমìðয়ে তৈরি। তাদের তৈরিকৃত পেপার চিপটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভি রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম। তবে আবিস্কৃত প্রযুক্তির কার্য সম্পাদনের ধরণ বিবেচনা করলে এরদাম অনেকেই বেশিই মনে করতে পারে। তবে আশ্চর্য্যরে ব্যাপার হচ্ছে প্রত্যেকটি পেপার চিপের মূল্য মাত্র ০.০২ ডলার থেকে ০.০৫ ডলারের মধ্যে।

৬. লিকুইড ব্যাটারী
আমাদের সবাই কমবেশি ব্যাটারি সম্পর্কে জানি। প্রথাগত ব্যাটারীগুলো ন্যূনতম একটি জড় পদার্থের সমìðয়ে তৈরি। গতানুগতিক ব্যাটারীর পরিবর্তন এনে ডোনাল্ড সেজেওযে আবিষ্কার করলেন লিকুইড ব্যাটারী ডোনাল্ড সেডোওয়ে সর্বপ্রথম লিকুইড ব্যাটারীর কথা চিন্তা করেন। তার ভাবনার ফল স্বরূপ তৈরি হলো লিকুইড ব্যাটারী। যা সৌর শক্তিতে চলবে।
আমরা সবাই জানি ভাল কোন উদ্যোগ ছাড়া বিদ্যুৎ খরচ কমানো কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। আর বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে হলে আমাদের দরকার সচেতনতা। আসলে সচেতন কয়জন? বলতে গেলে কেউই না। সেই দিক বিবেচনা করেই হয়তা ডোনাল্ড সেডোওয়ে লিকুইড ব্যাটারী আবিষ্কার করলেন। লিকুইড ব্যাটারী শুধুমাত্র দিনের আলোতেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারবে যা রাতের বেলায় ব্যাটারীর কোন প্রকার কার্যক্ষমতা থাকবে না। গতানুগতিক চার্জেবল ব্যাটারীর মত নয় এই লিকুইড ব্যাটারী। লিকুইড ব্যাটারী কোন প্রকার চার্জ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। মূলত লিকুইড ব্যাটারী লবণ/ক্ষার জাতীয় পদার্থ ও গলিত ধাতু দ্বারা তৈরি করা হবে যা সূর্যের আলোতে গলে বিদ্যুতের তৈরি করবে।

এমআইটির রসায়ন অধ্যাপক ও একজন অন্যতম ব্যাটারী আবিষ্কারক হিসেবে সকলেরই আশা ছিল ডোনাল্ড নতুন কিছু আবিষ্কার করুক। তার ফলশ্রুতিতে ডোনাল্ড সেডোওয়ের এই আবিষ্কার প্রশংসা করার মতো। নিচের দিকে থাকবে রসায়ন ধাতু, মাঝামাঝিতে থাকবে সোডিয়াম সালফাইড আর উপরি ভাগে ম্যাগনেসিয়ামের সমìðয়ে তৈরি হবে লিক্যুইড ব্যাটারি। রসাঞ্জন ধাতু, সোডিয়াম সালফাইড ও ম্যাগনেসিয়ামের বিক্রিয়ায় তৈরি হবে বিদ্যুৎ। তারপর উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎকে নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহের জন্য দু’টি আলাদা সেকশন ব্যবহৃত হবে। তবে ব্যাটারী ভেবে যে অনেকেই এর বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার নিয়ে দ্বিধাìিðত হবেন। তাদের জন্যই বলা। লিকুইড ব্যাটারী পুরো একটি অফিস বা একটি বাড়ির মধ্যে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা রাখবে। বোঝার সুবিধার্থে একটি সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেয়া যেতে পারে। নিইউয়র্ক শহরের ৬০০০০ বর্গ মিটারের মধ্যে প্রতি ২৪ ঘন্টার বিদ্যুৎ চাহিদা ১৩০০০ মেগাওয়াট। যার মধ্যে দিনের আলোর পুরো ভাগের বিদ্যুৎ চাহিদাই লিক্যুইড ব্যাটারীর দ্বারা সরবরাহ করা সম্ভব।

৭. ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টর
পারমানবিক গবেষণায় ব্যবহৃত রিএ্যাক্টরের জ্বালানি খরচ অনেক বেশি এটা সবাই জানে। পারমানবিক গবেষণার জ্বালানি খরচ কমাতে জন গিলিল্যান্ড আবিষ্কার করলেন ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টর। পারমানিক গবেষণায় জ্বালানির প্রয়োজন সব। আবার সময় সময় প্রয়োজন পুণরায় জ্বালানীর বন্দোবস্ত করা। তবে এই সব জ্বালানির ব্যবস্খা করাটা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য আর ব্যয়বহুল। তারপর আবার জ্বালানি সরবরাহ করার পর কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন নতুন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সেই সাথে পরিবেশ দূষণের ভয়তো আছেই। কিন্তু এই সকল সমস্যার সমাধান হবে ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টরটি। সর্বপ্রথম আমেরিকার বেলাভুর একটি পারমানিক গবেষণাগারের বিশেষজ্ঞরা রিএ্যাক্টরের চিন্তা মাথায় আনে। যা প্রচুর জ্বালানি খরচ কমাবে। সেই রিএ্যাক্টর এখন আরো কিছু নতুন ফিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টর। ট্রাভেলিং ওয়েভ রিয়েক্টর তৈরি হয় জন গিলিল্যান্ডের ব্যক্তিগত গবেষণায়। পারমানবিক গবেষণায় শুধুমাত্র একবারই প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। মূলত সেই জ্বালানি বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হবে। আর পরিবর্তনের জন্যই ব্যবহৃত হবে ট্রাভেলিং ওয়েভ রিঅ্যাক্টর। ইন্টেলেকচুয়াল ভেনচারের বিজ্ঞানী জন গিলিল্যান্ডের এই আবিষ্কারকে অনেক অর্থের অপচয় রোধ কমাবে তা সহজেই বোধগম্য। গিলিল্যান্ডের মতে প্রত্যেকটি ট্রাভেলিং ওয়েভ রিয়েক্টর কয়েকশ বছর ধরে একটানা চলবে। ফলে কমে যাবে জ্বালানি খরচ। জন গিলিল্যান্ডের মাথায় যে আরো একটি নতুন চিন্তা মাথায় এসেছে সেটা বলে রাখতেই হয়। তার ভাবনা হচ্ছে ইতোপূর্বে ব্যবহৃত জ্বালানিগুলোকে নতুন এই জ্বালানি সরবরাহে ব্যবস্খায় ব্যবহার করা। সাধারণত প্রত্যেকটি রিএ্যাক্টরে ইউরোনিয়াম ২৩৫ ব্যবহার করা হয় যা খুব সহজে চেইন রিয়েকশন করতে পারে। তবে ব্যাপারটা অনেক ব্যয় বহুল আর বেশ ঝামেলার। কারণ প্রতি ১৮ থেকে ২৪ মাসের ভেতর এই জ্বালানি রিএ্যাক্টরের পরিবর্তন আনতে হয়। দেখা যায়, ১০০ ইউরানিয়াম ফেলে দিয়ে নতুন ১০০ যোগ করা হয়। আর নতুন সংযোজিত ইউরোনিয়ামের নানারকম সমস্যাতো থাকেই। আর সমস্যার স্খানগুলোতে স্খাপিত ইউরোনিয়াম-২৩৫ কে সরিয়ে বসাতে হবে ইউরোনিয়াম-২৩৮। তবে নতুন ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টর শুধুমাত্র ইউরোনিয়াম-২৩৫ এর একটি সরু স্তর নিয়ে তৈরি হবে। ট্রাভেলিং ওয়েভ এ্যাক্টর মূলত ইউরোনিয়াম জ্বালানির একটি চমৎকার চক্র। যা চক্রাকারে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকবে।

১৯৯০ সালে সর্বপ্রথম ট্রাভেলিং ওয়েভ রিয়েক্টরের চিন্তা মাথায় এলেও তার সঠিক কোন বাস্তবায়ন হয়েছিল না। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এ বছরই প্রথম নতুন এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন ইন্টেলেকচুয়াল ভেনচারের বিজ্ঞানীরা। জন গিলিল্যান্ড তার আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ট্রাভেলিং ওয়েভ রিএ্যাক্টরকে সকল গবেষণাগারে ব্যবহার শুরু করা হবে।

০৮. ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স
অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকায়, শক্তি মিতব্যয়ী, সংবেদনশীল একটি রোগ নির্ণায়ক যন্ত্র আবিষ্কার করলেন জং লিং ওয়াং। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন এক মাত্রা যোগ করলো ন্যানোস্কেল সেন্সর। ন্যানোস্কেল সেন্সর মূলত রক্তের অণুতে লুকিয়ে থাকা জীবানু নির্ণয়ের এক অভিনব পথ আবিস্কৃত হলো। তাছাড়া বাতাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিষাক্ত গ্যাস নির্ণয়েও এক অভিনব পন্থা বের করেছে ন্যানোস্কেল সেন্সর। শুধু তাই নয়, খাবারের মাঝে সংক্রমণের মত জীবানুগুলোকেও ধরতে সক্ষম এই ন্যানোস্কেল সেন্সর। জর্জিয়া টেকের বিজ্ঞানী জং লিং ওয়াং এর আবিস্কৃত ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স এ রোগ নির্ণয়ের নতুন মাত্রা যোগ করলেও এর কিছু সমস্যাও আছে। ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্সের মূল সমস্যা হলো এটির ব্যাটারি ও সার্কিট। জং লিং ওয়াং ২০০৫ সালে বাকানো জিঙ্ক অক্সাইড দ্বারা তৈরি ন্যানোস্কেল সেন্সর। সেই সাথে পারমাণবিক অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা এর প্রাথমিক পরীক্ষার প্রমাণ দেখান। তিনি প্রমাণ করেন যে, জিঙ্ক ও অক্সাইড আয়ন মিলে বিদ্যুতের উৎপন্ন করেছে। মিলিভোল্টের এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নতুন কিছু আবিষ্কার করা যায় কিনা সেই চিন্তা মাথা ঢুকান জং লিং ওয়াং। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি তৈরি করেন ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স। নানাবিধ স্খানে জং লিং ওয়াং এর তৈরি করা ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্সকে ব্যবহার করা যাবে। তন্মধ্যে ন্যানো জেনারেটর, শ্রবণ যন্ত্র, স্বাক্ষর পরীক্ষা ও হাড়ের ক্ষয় পর্যাবেক্ষণের মত কাজে ব্যবহার করা যাবে।

ন্যানো জেনারেটর : কাপড়ের জং পড়া রোধে ব্যবহৃত হবে ন্যানো জেনারেটর।
শ্রবণ যন্ত্র : কানে কম শোনা মানুষের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করা যাবে নতুন এই ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স। যখন অন্যের কথা এই যন্ত্রের কাছে আসবে তখন তরঙ্গের সৃষ্টি হবে শ্রবণ যন্ত্রে। নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপমাত্রার সৃষ্ট হবে শ্রবণ যন্ত্রে। তাপমাত্রার বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে শব্দের উচ্চতা।
স্বাক্ষর পরীক্ষা : পূর্বের দেয়া স্বাক্ষরের সাথে সাম্প্রতিক দেয়া স্বাক্ষরের মাঝে তুলনামূলক পরীক্ষার জন্যও ব্যবহার করা যাবে ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স।
হাড়ের ক্ষয় পর্যবেক্ষণ : মেরুদন্ডের হাড় সহ শরীরের সকল হাড়ের ক্ষয় পর্যবেক্ষণের জন্যও ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করা যাবে। হাড়ের মধ্যে প্রচন্ড চাপ ও ক্ষয়কে ধরতে ন্যানো পিয়েজে ইলেকট্রনিক্সের মাধ্যমে বিশেষ আলোক রশ্মি প্রেরণ করা হবে দেহে।

০৯. হ্যাশ ক্যাশ
ওয়েব সাইটে কনটেন্ট (লেখা) সঞ্চয়ের জন্য অভিনব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করলো বিবেক পাই। বিবেক পাইয়ের তৈরিকৃত এই প্রযুক্তিটির নাম হ্যাশ ক্যাশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য হ্যাশ ক্যাশ সত্যি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কেননা হ্যাশ ক্যাশ পুরো বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকে আরো সাশ্রয়ী করবে।
সত্যিকার অর্থে উন্নয়শীল দেশের সাথে উন্নত দেশগুলোর ডিজটাল বৈষম্য কমাতে ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ সাশ্রয় করা প্রয়োজন। মূলত প্রয়োজনটা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। আর উন্নয়নশীল এই দেশগুলোতে হ্যাশ ক্যাশ ব্যবহারে আগ্রহের মাত্রা একটু বেশিই থাকবে।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী বিবেক পাই মূলত তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলোর কথা মাথায় রেখেই হ্যাশ ক্যাশ আবিষ্কার করেন। তিনি হ্যাশক্যাশের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমার জানা মতে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই কম-ব্যান্ডইউডথের ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার আকাশ পাতাল পার্থক্য। অনুন্নত দেশগুলোতে একজনের জন্য বরাদ্দকৃত ইন্টারনেট স্পিড দশজন বা বারোজনকে প্রদান করা হয়। ফলে সেসব দেশগুলোতে ওয়েব ব্রাউজিং করায় পিছিয়ে পড়ছে।’ সাধারণত র‌্যাম ও হার্ডডিস্ক সচল করতে কম্পিউটারের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে হয়। র‌্যাম ও হার্ডডিস্কের সঠিক সমìðয় হলেই মূলত হার্ডডিস্কে জমানো ফাইল অথবা ফোল্ডারকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। আসলে হার্ডডিস্ক ও র‌্যামের মধ্যে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এই পদ্ধতিতে আমরা হ্যাশ বলে জানি। কিন্তু প্রথাগত এই পদ্ধতির পরিবর্তনই হচ্ছে হ্যাশ ক্যাশ হ্যাশ ক্যাশ ব্যবহার করে যে কেউ সরাসরি হার্ডডিস্কে রাখা উপাত্তগুলোকে ব্যবহার করতে পারবে।
অনেকেই হয়ত ভাবছেন তাহলে ওয়েব কনটেন্টের সাথে এই হ্যাশ ক্যাশের সম্পর্ক কি?
মূলত ওয়েব ব্রাউজিং করার পর অফলাইনে সেই ওয়েবসাইট দেখার জন্য হ্যাশক্যাশ অত্যন্ত উপযোগী হবে। সেই সাথে তুলনামূলক ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। হ্যাশক্যাশের বর্ণনায় গেটিস নামের একজন বিশেষজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য দেয়। তার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘হ্যাশক্যাশ টেরাবাইট ব্যান্ডউইডথের একটি ওয়েবসাইটে খুব সহজেই ব্রাউজিংয়ের সুবিধা দেবে। সেই সাথে পুরো ওয়েবসাইটকেই অফলাইনে দেখার জন্য হার্ডডিস্কে সংরক্ষিত করে রাখা যাবে। তাই বলে যে, বিশাল স্টোরেজ ক্ষমতার হার্ডডিস্ক বা র‌্যাম লাগবে তা কিন্তু নয়। সাধারণ একটি কমান্ড ব্যবহার করেই উইকিপিডিয়া কিংবা ডব্লিউথ্রি স্কুলসের মত ওয়েবসাইটকে পিসি ক্যাশ মেমোরিতে সংরক্ষণ করা যাবে। আর প্রয়োজন অনুযায়ী সেই ওয়েব সাইট ব্যবহার করা যাবে।’
মনে হয়ত আরো একটি প্রশ্ন জেগেছে হ্যাশ ক্যাশ কিভাবে উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে উপকার করবে, তাই না? প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে না বা যারা পাচ্ছে তাদের ব্রাউজিং অবস্খাও তেমন ভাল নয় তাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই হ্যাশ ক্যাশ বিশদ সাহায্য করবে।

১০. নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার
সবসময়ই কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন কিভাবে নেটওয়ার্কিং স্পিড বাড়ানো যায়, নেটওয়ার্ক শক্তি অপচয় রোধ। নেটওয়ার্ক সিকিউরিটির ব্যাপারতো আছেই বিজ্ঞানীদের মাথায়। ব্যবহারকারীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন আবিষ্কার নিয়ে হাজির হয়। আর এসব আবিস্কারকে ব্যবসায়ের দিকে নিয়ে যায় সিসকো ও হিউলেট প্যাকার্ডের মত কোম্পানিগুলো। তবে বিজ্ঞানীদের নতুন সব আবিস্কারই যে, সর্ব সাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয় তা কিন্তু নয়। তবে নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মধ্যে অন্যতম সফটওয়্যার হতে পারে নিক ম্যাককেয়নের ওপেন ফ্লো সফটওয়্যারিটি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য আবিস্কৃত এই সফটওয়্যার উপাত্ত চলাচলকে সংজ্ঞায়িত করতে পারবে। ওপেন ফ্লো মূলত সংজ্ঞায়িত করবে পুরো একটি নেটওয়ার্কে। ওপেন ফ্লো সফটওয়্যার মূলত পুরো নেটওয়ার্কে ছক আকারে দেখাবে। যার মাধ্যমে কম্পিউটারের পুরো নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ করা যাবে। সফটওয়্যারটি কম্পিউটারে ব্যবহৃত সকল সফটওয়্যারকে আলাদা আলাদা করে প্রকাশ করবে। সফটওয়্যারটি মূলত রাউটারে ব্যবহার করা হবে। তবে সফটওয়্যারটি ল্যান নেটওয়ার্ক তৈরির সময় কম্পিউটারেও ব্যবহার করা যাবে। মূলত কি কাজে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হবে তা নিয়ে দ্বিধাìিðত অনেকেই। আসলে পুরো নেটওয়ার্কে নিরাপদ রাখতে এই সফটওয়্যারটি দারুণভাবে সহায়তা করবে। কেননা চুরির পথগুলো যদি নেটওয়ার্ক ম্যানেজার দেখতে পায় তাহলে সে সকল পথ ব করার ব্যবস্খা করতে পারবে। আর চুরির খোলা পথগুলোকে ধরিয়ে দিতেই ওপেন ফ্লো ব্যবহৃত হবে। ম্যাককেয়নের মতে, ‘গত ৪০ বছর ধরেই নেটওয়ার্ক নিরাপদ করতে নানা রকম সফটওয়্যার আবিস্কৃত হয়েছে। তবে নি:সন্দেহে ওপেন ফ্লো সফটওয়্যারটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করবে। আর একজন ব্যক্তি খুবই সহজেই সফটওয়্যারটির বিভিন্ন পরিবর্তন আনতে পারবে। ফলে নিজ নিজ নিরাপত্তার জন্য একজন ব্যবহারকারী নিজের মত উপায় দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। নেটওয়ার্ককে নিরাপদের অভিনব এই সফটওয়্যারটির আবিস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করেছে সিসকো, এইচটি, নেক, টি-মোবাইল, এরিকসন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা কবে আসছে নতুন এই ওপেন ফ্লো নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার।

সৌজন্যে : মাসকি ই-বিজ