প্রায়ই আমরা এক বা একাধিক পিসিকে সংযোগের প্রয়োজন বোধ করি। বিশেষ করে যখন আমরা অফিসের বাইরে থাকি ঠিক তখন প্রয়োজনটা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। আসলে প্রয়োজনটা কেমন? কখনো এমন হয় যে বিদেশে একজন ক্লায়েন্টকে একটা মেইল দিতে হবে। অথবা আপনার এক বু চট্রগ্রাম থেকে ফোন করলো ‘দোস্ত তাড়াতাড়ি আমাকে তোর তৈরি করা সিভিটা দে’। এরকম হাজারো দরকারেই আমাদের এক বা একাধিক পিসিকে সংযোগের প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে আসলে আমরা পেন ড্রাইভ বা অন্য কোন উপায় ব্যবহার করতে পারি না। তবে একই অফিসে বা পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানে ফাইল ট্রান্সফারের জন্য পেন ড্রাইভ ব্যবহার করাটা অনেক সহজ। আবার সব সময় ফাইল ট্রান্সফারের জন্যও পেন ড্রাইভ ব্যবহার সম্ভব নয়। মনে করেন আপনি আপনার অফিসে সাত তলায় বসেন কিন্তু আপনাকে বারবারই বিভিন্ন ফাইল তিন তলায় পাঠাতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পেন ড্রাইভ ব্যবহার করাটা সমীচিন বলে আমি মনে করি না। তবে দূরবর্তী স্খানে ফাইল ট্রান্সফার করার জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নাই। সেক্ষেত্রে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকা জরুরি। আজকের লেখায় চারটি পদ্ধতি আছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ফাইল বা ফোল্ডার শেয়ার করতে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে পারবেন। আসলে এই ক্ষেত্রে অনেক বেশি কম্পিউটার জানার দরকার নেই। নূন্যতম কম্পিউটার পারদর্শীরাই এই কাজগুলো করতে পারবেন।

ইথারনেট অথবা ফায়ারওয়্যার

সাধারণত সাময়িকভাবে এক বা একাধিক কম্পিউটারে সংযোগ দেবার জন্য ইথারনেট বা ফায়ারওয়্যার অত্যন্ত কার্যকরী পথ। ইথারনেট অথবা ফায়ারওয়্যার এ নেটওয়ার্ক করতে অবশ্যই আপনাকে আইইইই ১৩৯৪ মডেলের ক্যাবল প্রয়োজন। মূলত এই পদ্ধতিতে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সরাসরি তার দিয়ে একটি কম্পিউটারকে আরেকটির সাথে সংযোগ দিতে হবে। মূলত এটাই দ্রুত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আসলে আপনি ব্যক্তিগতভাবেই নিজস্ব কিছু আইপি এড্রেস তৈরি করবেন। তারপর দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে সংযোগ দিবেন। সেক্ষেত্রে যদি আপনার ডিএইচসিপি সার্ভার নাও থাকে তাহলেও সমস্যা নেই। আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই কানেকশন দিতে পারবেন। আগেই বলেনি আইইইই ১৩৯৪ মডেলের ক্যাবল ব্যবহার করবো ইথারনেট অথবা ফায়ারওয়্যার কানেকশন দিতে। তবে আমরা ব্লু-টুথ কিংবা ওয়াইফাই কানেকশনকেও এই নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারি। কেননা এই পদ্ধতি যোগ করলে আরো দ্রুততার সাথে ফাইল সরবরাহ করতে পারবো। ফায়ারওয়্যার মূলত উইন্ডোজ এক্সপিতেই ব্যবহৃত হয়। ভিসতা ফায়ারওয়্যার সেটআপ করা যায় না। এক্সপি ও ম্যাক কম্পিউটারগুলোতেই শুধুমাত্র ফায়ারওয়্যার কানেকশন দেয়া সম্ভব। ইথারনেট কানেকশন দিতে আপনাকে যা করতে হবে।

১. স্টার্টে ক্লিক করে কন্ট্রোল প্যানেল
২. নেটওয়ার্ক কানেকশন সিলেক্ট করে এন্টার
৩. লোকাল এরিয়া কানেকশন এ গিয়ে রাইট বাটনে ক্লিক করে প্রোপারটিজ এ ক্লিক করতে হবে
৪. ইন্টারনেট প্রোটোকল(টিসিপি/আইপি) সিলেক্ট করে প্রোপারটিজ এ ক্লিক করতে হবে
৫. তারপর ইউজ দ্যা ফলোইং আইপি সিলেক্ট করে আইপি এড্রেস দিতে হবে। আইপি এড্রেস হতে পারে ১৯২.১৬৮.০.১ সাবনেট মাস্কে হতে পারে ২৫৫.২৫৫.২৫৫.০। ঘর দুটো পূরণ করার পর বাকিগুলো ফাকা রেখেই ওকে বাটনে ক্লিক করবো। এবার একই রকমভাবে দ্বিতীয় কম্পিউটারেও আইপি এড্রেস ও সাবনেট মাস্ক এড্রেস দিব। তবে এবার পার্থক্য হবে শুধু আইপি এড্রেস হবে ১৯২.১৬৮.০.২। আর এভাবে প্রত্যেকটি কম্পিউটারে কানেকশন দিব ভিন্ন ভিন্ন আইপি ব্যবহার করে।

অফলাইন পিসিতে ইন্টারনেট কানেকশন
আসলে এই পদ্ধতিতে একটি অফলাইন পিসিকে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়া যাবে। মনে করুন আপনার অফিসে শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার এ ইন্টারনেট কানেকশন আছে। আর বাকি সব কম্পিউটারই ল্যান নেটওয়ার্কের আওতাধীন। এবার আপনি চাচ্ছেন ইন্টারনেটও থাকুক প্রত্যেকটি কম্পিউটারে। সেক্ষেত্রে আপনি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন।
কথা হচ্ছে এক কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন আছে আর অন্যটিতে নেই। আপনি চাচ্ছেন যে কম্পিউটারে নেই সেটাতেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে। সেজন্য অবশ্যই আপনাকে ইথারনেটের মাধ্যমে দুটো পিসিকে সংযুক্ত করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ওয়াইফাই সিগন্যাল কার্যকরী নয়। এই পদ্ধতিতে নেট ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই আপনাকে দুটি কম্পিউটারে তারযুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিতে হবে। এবার আপনাকে যা করতে হবে। তা হচ্ছে হোস্ট কম্পিউটারটিকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতাধীন করতে হবে। আসলে এই পদ্ধতিতে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা অত্যন্ত ঝামেলার। তাই সচরাচর এই পদ্ধতিতে নেটওয়ার্ক করতে তেমন কাউকে দেখা যায় না। মূলত রাউটারের আইপি অনুযায়ী এর সাবনেট মাস্ক নিরূপণ করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, রাউটারে ১৯২.১৬৮.০.স থাকলে আপনাকে দিতে হবে ১৯২.১৬৮.০.স। সে যাই হোক এই নেটওয়ার্ক স্খাপন করতে আপনাকে নিমোক্ত স্টেপগুলো নিতে হবে। ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারের কন্ট্রোল প্যানেল এ যেতে হবে।
১. নেটওয়ার্ক কানেকশন সিলেক্ট করে এন্টার
২. লোকাল এরিয়া কানেকশন এ গিয়ে রাইট বাটনে ক্লিক করে প্রোপার্টিজ এ ক্লিক করতে হবে
৩. এবার এ্যাডভান্স ট্যাব হতে ‘এলাও আদার নেটওয়ার্ক উইজারস’ এর চেক বক্সটাকে টিক দিতে হবে। তারপর ওকে ক্লিক করতে হবে।
৪. তারপর যদি প্রয়োজন হয় তবে লোকাল এরিয়া কানেকশনের ক্লায়েন্ট কম্পিউটারের ১৩৯৪ পোর্টটিকে চিনিয়ে দিতে হবে।

এ্যাডহক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে দুটি কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক পদ্ধতি
সাময়িকভাবে ওয়াইফাই কানেকশনগুলো আসলে একটু ভিন্ন রকম। কারণ অনেকগুলো কম্পিউটারের একসাথে নেটওয়ার্ক করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক। আসলে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে হোস্ট কম্পিউটারকে তারযুক্তভাবে নেটওয়ার্কের আওতাধীন করা হয়। আসলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেই এই নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে হয়। তাহলে দাড়াচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ল্যান কানেকশন। অধিকাংশ ওয়াইফাই সংযুক্ত কম্পিউটারই ওয়াইফাই হার্ডওয়্যার বিক্রেতা হতে কিছু ইউটিলিটি সংগ্রহ করে। সে দিক বিবেচনায় এই পদ্ধতিতে দুটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করা বেশ ঝামেলার। তারপর উইন্ডোজ প্লাটফর্মে আমি এই ধরণের কানেকশন তৈরির ধাপগুলো বলছি।
১. প্রথমে কন্ট্রোল প্যানেল খুলে নেটওয়ার্ক কানেকশন
২. তারপর লোকাল এরিয়া কানেকশনের প্রোপার্টিজ এ ক্লিক করতে হবে
৩. তারপর এ্যাডভান্স ট্যাব থেকে ‘এলাও আদার নেটওয়ার্ক উইজারস’। তারপর ওকে।

সেইসাথে আপনার করণীয় আরো কিছু স্টেপ হচ্ছে।
১. কন্ট্রোল প্যানেল খুলে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপ উইজার্ডের মাধ্যমে নতুন একটি নাম দিয়ে ওয়্যালেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা। তবে খেয়াল করে কম্পিউটার টু কম্পিউটার চেক বক্সটি টিক দিয়ে যেতে হবে।
২. তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী সময়ে আপনাকে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক কানেক্ট করে কাজ শুরু করতে হবে।

সাময়িক ফাইল ট্রান্সফার
আসলে ইথারনেট কানেকশন এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারের ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্য দারুণ একটি উপায় মাই নেটওয়ার্ক প্লেস পদ্ধতি। মুলত সাময়িকভাবে ফাইল স্খানান্তরের জন্য এই উপায় অত্যন্ত ভাল। আসলে এই উপায়টি কিভাবে একটিভেট করবো চলুন তা জেনে নেই। মনে করেন আপনি আপনার কম্পিউটারের একটি ড্রাইভকেই শুধুমাত্র নেটওয়ার্কের অন্যদের জন্য উন্মুক্ত করবেন। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। যে ফোল্ডারকে শেয়ারিংয়ের আওতায় রাখতে চান সেই ফোল্ডারটিতেই নিতে হবে নিন্মোক্ত পদক্ষেপ।
১. ফোল্ডারটির প্রোপার্টিজ খুলতে হবে। তারপর শেয়ারিং এবং সিকিউরিটি সিলেক্ট করতে হবে।
২. তারপর শেয়ার দিজ ফোল্ডার অন দ্যা নেটওয়ার্ক। তারপর এ্যাপ্লাই ক্লিক করতে হবে।

মূলত এই ধরণের কানেকশন দিতে ক্লায়েন্ট কম্পিউটার নিয়েই যত কাজ। চলুন ক্লায়েন্ট কম্পিউটারে কি কি স্টেপ নিতে হবে জেনে নেই।
১. মাই কম্পিউটার ওপেন করতে হবে
২. মাই নেটওয়ার্ক প্লেস এ ক্লিক করতে হবে
৩. এ্যাড এ নেটওয়ার্ক প্লেস সিলেক্ট করতে হবে। তারপর দুইবার নেক্সট ক্লিক করতে হবে
৪. তারপর চুজ এনাদার নেটওয়ার্ক লোকেশন সিলেক্ট করতে হবে
৫. ব্রাউজে ক্লিক করার পর এন্টায়ার নেটওয়ার্ক প্লেস, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এবং ওয়ার্কগ্রুপ সিলেক্ট করতে হবে।
৬. সেইসাথে হোস্ট কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। হোস্ট কম্পিউটারের সাথে কানেকশন পেয়ে গেলে ওকে ও ফিনিস এ ক্লিক করে কানেকশন নিশ্চিত করতে হবে।

ব্লু-টুথ
কম্পিউটারে ব্লু-টুথকে আসলে ওয়াইফাইয়ের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ ব্লু-টুথ এর মাধ্যমে খুব সহজে আপনি ফাইল স্খানান্তর করতে পারবেন। আসলে ল্যাপটপ টু ল্যাপটপ ফাইল ট্রান্সফারের জন্য ব্লু-টুথ ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী। অনেকেই মোবাইলে ব্লু-টুথ ব্যবহারের পারদর্শী। সাধারণত ল্যাপটপ টু ল্যাপটপে ২ মিনিটে ৫ মেগাবাইট ফাইল ট্রান্সফার করা যায়। চমৎকার আরো একটি ব্যাপার হচ্ছে ল্যাপটপ থেকে মোবাইলে ফাইল ট্রান্সফারের জন্যও এই ব্লু-টুথ পদ্ধতিকে সাধুবাদ দিতে হয়। তবে আপনারা যারা ল্যাপটপে ব্লু-টুথ সার্ভিস ব্যবহার করতে চান, তাদের অবশ্যই ব্লু-টুথ ল্যাপটপে আছে কিনা তা নিশ্চিত করে নিতে হবে। আর যাদের ব্লু-টুথ সার্ভিস আছে তারা এখনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন।

ফাইল যে পাঠাচ্ছে তার করণীয়
১. ব্লু-টুথ সফটওয়্যারটি ওপেন করতে হবে
২. তারপর ফাইল ট্রান্সফার উইজার্ড হতে একসেসরিজ হতে কমিউনিকেশন ফোল্ডারটি খুলে তাতে যে ফাইল দিতে চান তা কপি করে পেস্ট করতে হবে।
৩. তারপর সেন্ড এ ফাইল
৪. তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে কম্পিউটারে ফাইল ট্রান্সফার করা হচ্ছে তার ডিভাইস নম্বরটি দিতে হবে। ডিভাইস নম্বরকে পাসকি বলা হয়। আর পাসকি সেট করতে অবশ্যই ব্রাউজ ট্যাবটি ওপেন করে তারপর বসাতে হবে।

ফাইল যে চাচ্ছে তার করণীয়
১. ব্লু-টুথ সফটওয়্যারটি ওপেন করতে হবে
২. তারপর ফাইল ট্রান্সফার উইজার্ড ওপেন করতে হবে
৩. একসেসরিজ হতে কমিউনিকেশন ফোল্ডারটি খুলতে হবে
৪. তারপর ‘রিসিভ এ ফাইল নামের রেডিও বাটনটি সিলেক্ট করে নেক্সট দিতে হবে


সৌজন্যে : মাসকি ই-বিজ