বনভূমি সংরক্ষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে শুরু হতে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুগল। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি গুগল আর্থ সাইটের মাধ্যমে এই প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। ‘গ্রুপ অন আর্থ অবজারভেশন (জিইও)’-এর উদ্যোগে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্পে গুগল ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ভারত, ইতালি ও ব্রাজিল) মহাকাশ গবেষণা সংস্থাও রয়েছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমে বনভূমির পরিমাণ ও গাছপালায় কী পরিমাণ কার্বন জমা আছে, তা বিশ্লেষণ করা হবে। উদ্ভিদদেহে প্রচুর পরিমাণে কার্বন থাকে এবং নিজের খাদ্য প্রস্তুতের জন্য পরিবেশ থেকে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। গাছ কেটে পোড়ানো বা পানিতে ভিজিয়ে পচানো হলে এতে থাকা কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড ইত্যাদি হিসেবে অবমুক্ত হয়। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার এক-পঞ্চমাংশ বাড়িয়ে দেয় বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে সবুজের ঘনত্ব দেখে বনভূমির পরিমাণ নির্ণয়ের পাশাপাশি ‘রাডার ইমেজ’ (এক বিশেষ ধরনের ছবি, যাতে কোনো দৃশ্যের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের দ্বিমাত্রিক ম্যাপিং পাওয়া যায়)-এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার গাছপালায় বিদ্যমান মোট কার্বনের পরিমাণ সম্বন্ধেও ধারণা করা যায়। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ক্যামেরুন, গায়ানা, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, তাঞ্জানিয়া—এই সাতটি দেশে খুব শিগগির পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। জিইওর নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বাত্সরিক মোট কার্বনের পরিমাণ নির্ণয় করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর সঙ্গে এর তুলনা করা হবে। এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রেরিত ‘ল্যান্ডসেট’ উপগ্রহের পাঠানো ছবি ব্যবহার করে।

বনভূমি যেকোনো দেশের ফুসফুসস্বরূপ। পরিবেশ ও বন সংরক্ষণে জিইও, গুগল ও অন্যান্য সংস্থার সম্মিলিত এই প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবেই মানবসভ্যতার জন্য মঙ্গলময় হবে। সবুজ ও দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে গুগলের এই এগিয়ে আসাকে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে।

সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো