Posted by Admin | 4:54 AM

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, জাহাজভাঙা শিল্পে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ বাংলাদেশ। সস্তা শ্রম আর পরিবেশ আইনের দুর্বল প্রয়োগ আমাদের এ শিল্পকে শীর্ষস্থানে যেতে সাহায্য করেছে। প্রায় ৪০ বছর আগে চট্টগ্রামের সমুদ্রসৈকতে একটি জাহাজ ভাঙার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্পের শুরু। বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী বিশ্বের সমুদ্রগামী জাহাজের প্রায় ৬০ ভাগ বাংলাদেশে ভাঙা হয়। প্রত্যক্ষভাবে ৩০ হাজার আর পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ মানুষের আয়-রোজগার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। জাহাজভাঙা শিল্প থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৯০০ কোটি টাকা কর পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের নির্মাণশিল্পে প্রতিবছর যে প্রায় ৮০ লাখ টন রডের দরকার হয়, তার ৯০ শতাংশের জোগান আসে এখান থেকে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশনের নিয়ম অনুযায়ী একটি সমুদ্রগামী জাহাজের আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ২৯ বছর। এরপর সেটি ভাঙতেই হবে।

বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পকে ঘিরে এমন আরও অনেক কৌতূহলোদ্দীপক, অজানা ও আশা-জাগানিয়া, মন-খারাপ করা তথ্য দেওয়া আছে www.shipbreak ingbd.info ওয়েবসাইটে। শুধু জাহাজভাঙা শিল্পের খবরাখবর নিয়েই এই ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটে একটি সাইটম্যাপ আছে, যেখান থেকে আপনি শুরুতেই জেনে নিতে পারেন ওয়েবসাইটে কী কী আছে। এটি তৈরির ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের সাইটম্যাপ নির্মাণের গতানুগতিক ধারা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে, এতে নতুনত্ব থাকলেও এটি ওয়েবসাইটের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত করেছে। একনজরে পুরো ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানার সুযোগ সীমাবদ্ধ করেছে, বরং সাইটম্যাপ নির্মাণের প্রচলিত ধারা অনুসরণ করে বর্ণানুক্রমিকভাবে বিষয় ও উপবিষয় দিয়ে এটি সাজালে ভালো হতো।

এ ওয়েবসাইট ঘুরে আসার পর আপনার মন খারাপ হতে বাধ্য। কারণ, স্কুলে পড়তে যাওয়ার বয়সী শিশুশ্রমিকের সংখ্যা জাহাজভাঙা শিল্পে মোট শ্রমিকের ১০ শতাংশের বেশি। বাবার মৃত্যু, নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া আর এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধে অভিভাবকের ব্যর্থতা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে আসতে বাধ্য করেছে। প্রতিবছর এ শিল্পে দুই অঙ্কের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত বছরও ১৫ জন শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে। আর মারাত্মক ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বছরে গড়ে তিন শতাধিক। তবে কোনো কোনো বছর একেকটি বড় দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৫০-৬০ জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। যেমন, ২০০০ সালে টিটি ডেনা ট্যাংকার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওয়েবসাইটের প্রথম পাতার ‘ফটো’ বোতাম টিপে ৪০টি ছবি পাওয়া যাবে, যেগুলোর মধ্যে শিশুশ্রমিকের কাজ করার ছবিও আছে। তবে এখানে একই ধরনের ছবির সংখ্যা বেশি। জাহাজভাঙা শিল্পকে সামগ্রিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য ছবির আরও কার্যকর ব্যবহার এখানে ঘটানো যেতে পারত।

এ ওয়েবসাইটের আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো, সাইটটির ভাষা ইংরেজি। এর কোনো বাংলা সংস্করণ নেই। তবে ‘রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন’ বোতাম টিপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন পাবেন, যেগুলোর মধ্যে বাংলায় লেখা প্রতিবেদনও রয়েছে। এগুলো পিডিএফ আকারে থাকায় সহজেই ডাউনলোড করে নিয়ে পড়া যেতে পারে।

এ রকমই একটি প্রতিবেদন হলো ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) প্রকাশিত ‘পর্যালোচনা: বাংলাদেশের জাহাজভাঙা কার্যক্রম’। এ প্রতিবেদনের মুখবন্ধে শিক্ষাবিদ জামাল নজরুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, ‘সচেতনতা ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে জাহাজভাঙা কার্যক্রম প্রতিনিয়ত পরিবেশকে করছে মারাত্মক দূষণের শিকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাবে এখানকার শ্রমিকদের অধিকার হচ্ছে চরমভাবে লঙ্ঘিত। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহত হওয়া, শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাব, মালিকপক্ষের দায়িত্বহীনতা, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন, সার্বিক পরিবেশদূষণ প্রভৃতি জাহাজভাঙা কার্যক্রমের নিত্যঘটনা।’ শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় জানা যাবে ‘রাইটস ভায়োলেশন্স’ বোতাম টিপে আর ‘এনভায়রনমেন্ট পলিউশন’ বোতাম টিপে পরিবেশদূষণের বিষয়টি বোঝা যাবে।

এ ওয়েবসাইটের একটি ভালো দিক হলো, প্রতি মাসেই সাইটটির বেশির ভাগ পাতা হালনাগাদ করা হয়। কোনো অদ্ভুত কারণে, নাকি ভুল করে ওয়েবসাইটের ‘এক্সটারনাল লিংকস’ ও ‘কনটাক্ট আস’ বোতাম দুটি একসঙ্গে রাখা হয়েছে।


সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো