বসবাসের জন্য ডিজিটাল ঘর অর্থাৎ লিভিং রুম অবশেষে লাখ লাখ মানুষের জীবনে বাস্তব হয়ে দেখা দিয়েছে। কেননা প্রযুক্তি এখন অপেক্ষাকৃত সস্তা হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে সহজ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক পণ্যের মেলা কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে প্রদর্শিত প্রযুক্তিগুলো মানুষের জীবনযাপনকে অনেক সহজ করে দেওয়ার কাজটি করে দেবে। এ প্রদর্শনী থেকে বিবিসি নিউজ ডিজিটাল লিভিং রুমের জন্য ১০টি প্রধান প্রযুক্তিকে বেছে নিয়েছে।
১. ডিজিটাল বাড়ি: কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে (সিইএস) প্রদর্শিত বেশির ভাগ প্রযুক্তিই মানুষের বসবাস বিশেষ করে বাড়ির দেখভাল করার কাজকে সহজ করে দেয়। সেসব প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে তৈরি করা একটি বাড়ি সিইএসে দেখানো হয়। ডিজিটাল বাড়িতে রয়েছে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন। এ ছাড়া প্রতিটি কক্ষেই প্রযুক্তির ছড়াছড়ি।
২. হোম সার্ভার: বাড়িতে ব্যবহারযোগ্য এই সার্ভারে টেরাবাইট (১০২৪ গিগাবাইট = ১ টেরাবাইট) পরিমাণ তথ্য ধারণ করা যায়। চলচ্চিত্র ও সংগীত সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে এই হোম সার্ভারকে কাজে লাগানো যাবে। কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে মাইক্রোসফট হোম সার্ভারের প্রদর্শনী করেছে। যেকোনো কম্পিউটারের মাধ্যমে এই হোম নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা যায়। বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে ফাইল নিয়ে হোম সার্ভারে সংরক্ষণ করা যায়।
৩. ডিজিটাল লিভিং নেটওয়ার্ক অ্যালায়েন্স: ডিজিটাল লিভিং নেটওয়ার্ক অ্যালায়েন্স (ডিএলএনএ) তৈরি হয়েছে ২৫০টিরও বেশি কোম্পানির সমন্বয়ে। এসব কোম্পানি তারহীন ও তারযুক্ত নেটওয়ার্ককে মানসম্মত করার চেষ্টা করছে। ডিএলএনএ যেসব পণ্যকে ছাড়পত্র দিয়েছে, সেসব পণ্য পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবে। ডিএলএনএর ছাড়পত্র পাওয়া ক্যামেরা, টেলিভিশন, প্রিন্টার, ছবির ফ্রেম বা মিডিয়া প্লেয়ারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কথা বলতে পারবে।
৪. স্নার্ট টেলিভিশন: স্নার্ট টেলিভিশনগুলো সরাসরি ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। এসব টেলিভিশনে রয়েছে ইথারনেট। টেলিভিশনগুলো এই ইথারনেটের মাধ্যমে একিউইউওএস নেটের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়। এর ফলে দর্শকেরা টেলিভিশন দেখার পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে যেকোনো প্রোগ্রাম, ছবি, গান, সিনেমা ইন্টারনেট থেকে নামাতে পারবে।
৫. তারহীন প্রজেক্টর: যাঁরা বিশাল পর্দার টেলিভিশন চান না কিন্তু বড় পর্দায় সিনেমা, নাটক, অনুষ্ঠান দেখতে চান তাঁদের জন্য প্রক্ষেপকই (প্রজেক্টর) হচ্ছে একমাত্র সমাধান। এ বছরের কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে তোশিবা অতি সাম্প্রতিক মডেলের তারহীন প্রজেক্টরের প্রদর্শন করেছে। এটি দেয়ালের থেকে মাত্র এক মিটার দুর থেকে ৬০ ইঞ্চির বিশাল ছবি দেখাতে পারে। এই প্রজেক্টর নেটওয়ার্ক রয়েছে এমন পারসোনাল কম্পিউটার থেকে যেকোনো ছবি প্রক্ষেপণ করতে পারে।
৬. দুই পর্দার টেলিভিশন: আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে চ্যানেলের সংখ্যা এখন কম নয়। লিভিং রুমে টেলিভিশন দেখতে বসে একেকজনের একেক চ্যানেল পছন্দ। কিন্তু টেলিভিশন তো একটি। এই সমস্যার কিছুটা সমাধান করবে দুই পর্দার টেলিভিশন। এ বছরের প্রদর্শনীতে স্যামসাং ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্লাজমা টেলিভিশন দেখিয়েছে। স্যামসাং জানায়, এই টেলিভিশনের দুটি পর্দা একই সময়ে দুটি চ্যানেল দেখাবে। তবে এই টেলিভিশন দেখার একটি অসুবিধা হচ্ছে প্রিয় চ্যানেল দেখার জন্য দর্শককে বিশেষ চশমা পরতে হবে।
৭. সর্বজনীন রিমোট: লিভিং রুমে পিসি প্রবেশ করার পর এবং টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ রিমোট কন্ট্রোল বা দুর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র তৈরি করেছে এসব পিসি ও টেলিভিশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কি-বোর্ড ও মাউসের সমন্বয় ঘটিয়ে তৈরি এই রিমোট কন্ট্রোলটি আকারে হাতের তালুর সমান। পিসি ও টেলিভিশন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লুটুথ প্রযুক্তি। ১০ মিটার দুর থেকেও এটি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে পুনরায় চার্জযোগ্য ব্যাটারি।
৮. তারহীন ফ্রেম: তারহীন ফটো ফ্রেম আসলে ডিজিটাল ডিসপ্লে বা মনিটর। তার ছাড়াই এটি কাছে থাকা কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন থেকে ছবি নিয়ে নেবে। তারপর ফটো ফ্রেমে সেই ছবি দেখা যাবে।
৯. মিউজিক স্ট্রিমস: অনেকে আছেন স্টেরিওর মাধ্যমে গান শুনতে চান কিন্তু আবার চান যে তাঁদের পিসিতে গানের বিশাল ভান্ডার থাকুক। স্িলম স্কুইজবক্স তাঁদের এ চাওয়া পূরণ করে চলছে কয়েক বছর ধরে। এই ডিভাইসটি একটি মানসম্মত হাইফাইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। তারবিহীন এই বাক্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে সংরক্ষণ করা গান শনাক্ত করতে পারে এবং সেই গান স্টেরিওতে প্লে করতে পারে।
১০. চেহারা শনাক্ত করা: প্যানাসনিক এই বিশাল পর্দার টেলিভিশন তৈরি করেছে। এটা লিভিং রুমে আসা আগন্তুকের চেহারা মনে রাখবে আর তার চলাচল পর্যবেক্ষণ করবে।