নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক হলো ইন্টারনেট। সহজভাবে বলতে গেলে অসংখ্য কম্পিউটারের তথ্যভান্ডারের বিশাল এক জাল।এই জালে আমরা সবাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছি। কি ব্যক্তিগত, কি প্রাতিষ্ঠানিক−সব ক্ষেত্রেই খুব জরুরি হয়ে উঠছে ইন্টারনেটে নিজস্ব উপস্িথতি নিশ্চিত করা। ইন্টারনেটে নিজের বা প্রতিষ্ঠানের উপস্িথতি নিশ্চিত করার একটিই উপায় আছে, তা হলো ওয়েবসাইট প্রকাশ করা। প্রযুক্তিতে আমরা পিছিয়ে থাকলেও ওয়েবসাইটের তৎপরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার অবকাশ নেই। ইন্টারনেটে শুধু ওয়েবসাইট প্রকাশ করলেই হবে না, একে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে দরকার খুব ভালো পরিকল্পনা। নান্দনিকভাবে সুন্দর, প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বস্ত হতে হবে ওয়েবসাইটকে।তাই ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনার বিভিন্ন দিক জানা থাকা দরকার আগে থেকেই। যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় রাখতে হয় তা হচ্ছে: ডোমেইন নিবন্ধন, হোস্টিং সার্ভার, ডিজাইন ও তথ্য-উপস্থাপন পদ্ধতি, সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা, কোথা থেকে কারা সাইটটি দেখছে তার পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ।


ডোমেইন
ইন্টারনেটে আপনার উপস্থিতির প্রধান শর্ত−আপনার ওয়েবসাইটটির একটি ঠিকানা থাকতে হবে। এই ঠিকানাই হচ্ছে ডোমেইন।ঠিকানার জন্য ডোমেইন নিবন্ধন করতে হবে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেইমস অ্যান্ড নাম্বারস অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ডোমেইন নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য খরচ হতে পারে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত। আকর্ষণীয় বিশেষ ঠিকানা কিনতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করতে হতে পারে। কাঙ্ক্ষিত ডোমেইন ঠিকানা পাওয়া যাবে কি না তা জানতে www.netsol.com- গিয়ে find a domain বিভাগে খোঁজ করার সুযোগ পাবেন। এ জন্য দক্ষ পেশাদারদের সহায়তা নেওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আকর্ষণীয় ডোমেইনের খোঁজখবর নেওয়ার পর একপর্যায়ে তা বেহাত হয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি শুরু হলে অনেক প্রতিষ্ঠান বুঝতে পারে কোন ডোমেইন গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেটা হিসাব করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখে সেই সব প্রতিষ্ঠান। পরে দেখা যায়, ওই ডোমেইনের নম্বর পেতে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন যেকোনো একটা ডোমেইন হলেই হয়ে যায়, ব্র্যান্ড সচেতন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তা না করে যেকোনো মূল্যে কাঙ্ক্ষিত ডোমেইন অধিকার করতে চায়। এ জন্য ডোমেইন বেচাকেনার একটা বাজার দাঁড়িয়ে গেছে ইন্টারনেটে।


হোস্টিং সার্ভার
ইন্টারনেটের মূল সংযোগে (ব্যাকবোন) যুক্ত কম্পিউটার সার্ভারের মাধ্যমে সারা বিশ্বের লাখ লাখ ওয়েবসাইট সক্রিয় থাকে। এই সার্ভারে ওয়েবসাইটকে রাখতে হয়। ওয়েবসাইট রাখার এ বিষয়কে হোস্টিং বলে। আমাদের দেশ থেকে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভারে জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়। মাসিক বা বার্ষিক ভাড়ার মাধ্যমে সার্ভারে একটি ফোল্ডার বরাদ্দ করা হবে। তবে খরচ বাড়ালে পুরো হার্ডডিস্ক বা আলাদা একটি কম্পিউটার ভাড়া নেওয়া যায়। সার্ভার কর্তৃপক্ষ একটি আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ঠিকানা দেবে এবং ডোমেইন তাদের সার্ভারে রেখে দেবে। নির্দিষ্ট পরিচয় (আইডি) ও গোপন সাংকেতিক শব্দ (পাসওয়ার্ড) ব্যবহার করে ফাইল ট্রান্সফার প্রোটোকল (এফটিপি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে যেকোনো সময় বরাদ্দ হওয়া মূল ফোল্ডারে ঢুকতে পারবেন। এখানে ওয়েবসাইটের ইনডেক্স ফাইল রেখে আপনি যুক্ত হবেন ইন্টারনেট জগতে। বিশ্বের যেখানে ইন্টারনেট আছে, সেখানেই ওয়েবসাইট দেখার সফটওয়্যারে থাকা নির্দিষ্ট ছকে ডোমেইন ঠিকানা লিখলে ওয়েবসাইটটি দেখা যাবে।


নকশা ও তথ্য-উপস্থাপন পদ্ধতি
নির্দেশিকা বা কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি পুস্তিকায় যেমন আকর্ষণীয় নকশা করা থাকে তেমনি একটি ওয়েবসাইটও সেভাবে আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারে সহজ করার চেষ্টা করা হয়। তবে বেশি খেয়াল রাখা দরকার, প্রথম পৃষ্ঠা বা হোমপেইজ যেন ভারী না হয়। খুব রংচঙে এবং ছবিতে ভরা পৃষ্ঠা হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য তা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সাইটটি ব্যবহারকারীর মনিটরে দেখা না গেলে তিনি এটা বাদ রেখে অন্য সাইটে চলে যাবেন। মূলত দুই ধরনের ওয়েবসাইট হয়ে থাকে−স্ট্যাটিক এবং ডেটাবেইস (তথ্যভান্ডার) চালিত ড্রাইভেন বা ডাইনামিক। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট খুব সাধারণ হতে পারে, যা এমএস ওয়ার্ড দিয়েও করা সম্ভব। আবার যথেষ্ট সময় ও অর্থ খরচ করে ডাইনামিক বা ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েবসাইটও করা হয়। ই-কমার্স বা বাণিজ্যিক লেনদেন করতে পারে এমন সাইটগুলো এ রকম ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। স্ট্যাটিক সাইটের ক্ষেত্রে হোমপেইজের পেছনে অনেক ওয়েবপেইজ ও ছবি থাকতে পারে, যা সংযুক্তির মাধ্যমে দেখা হয়। ডাইনামিক সাইটের লেখা, ইমেজ বা অন্যান্য ফাইল ডেটাবেইস পদ্ধতিতে ওয়েবসার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। ফলে একই লেখা বা ফাইল নানাভাবে তুলে ধরা যায়। ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হয়ে ওঠে। তাই তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে তাল মেলাতে গিয়ে পুরো সাইটটি ফেলে দিতে না হয়। এ জন্যই বড় বড় বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ডেটাবেইসনির্ভর সাইট অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, বেশ দ্রুত সাইট দেখা যায়।


সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সাইট
একটি ওয়েবসাইট চালু করার পর সেটি পর্যাপ্তসংখ্যক মানুষযাতে দেখে সেই চেষ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি ডোমেইন ঠিকানা লিখে তারাই ওয়েবসাইটে যায়, যারা ঠিকানাটি জানে। কিন্তু যারা ঠিকানাটা জানে না তাদের আকৃষ্ট করতে সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।সাধারণভাবে ইন্টারনেটে তথ্য খোঁজা হয় সার্চ ইঞ্জিন (গুগল, ইয়াহু!, লাইকোস প্রভৃতি) ব্যবহার করে। এখানে বিষয় ধরে প্রধান প্রধান শব্দ (কিওয়ার্ড) খুঁজলে শত শত ওয়েবসাইটের তালিকা চলে আসে। এ তালিকায় ওয়েবসাইটের অবস্থান শুরুর দিকে রাখতে চাইলে দরকারি কিছু শব্দ আপনার ওয়েবসাইটের প্রোগ্রামিং সংকেতে মেটা ট্যাগ হিসেবে যুক্ত করতে হবে। এ কাজটির দায়িত্ব দক্ষ ওয়েবমাস্টারের। শুধু এই দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, যাঁদের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার বলা হয়। ওয়েবসার্ভার কর্তৃপক্ষ কন্ট্রোল প্যানেলের পাশাপাশি একটি পরিসংখ্যান পৃষ্ঠা দেয়, যার মাধ্যমে জানা যায় সাইটটি কতজন দেখেছেন, কোন পৃষ্ঠা কতবার দেখা হয়েছে, কোন দেশ থেকে কোন আইপি ব্যবহার করে কতজন সাইটটি দেখেছে, কত ব্যান্ডউইডথ ব্যবহূত হয়েছে ইত্যাদি তথ্য। এই পৃষ্ঠাটি নিয়মিত পড়া উচিত।


নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ
প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে ডোমেইনের নিরাপত্তাকে। একটি ডোমেইনের মেয়াদ থাকে ন্যুনতম এক বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নবায়ন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বেখেয়ালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে আরেকজনের হাতে চলে গেছে।তাই যতটা সম্ভব দীর্ঘ মেয়াদের জন্য একটি ডোমেইন নিবন্ধন করা উচিত। ডোমেইনের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান ডোমেইন নিবন্ধনের কাজটি করে দেয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডোমেইনটির পুরো নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে থেকে যায়। সাধারণভাবে নেটসল ডট কমের whois বিভাগে গিয়ে খোঁজ নেওয়া যায় ডোমেইনটি কার নামে নিবন্ধন করা হয়েছে এবং administrative contact-এ কার নাম ও ই-মেইল রয়েছে, মেয়াদ কবে শেষ হবে ইত্যাদি। যদিও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কিছু না কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকবেই। তবে সার্ভার থেকে পাওয়া সঠিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে আইনি আশ্রয়ের সুযোগ পাওয়া যায়।ডোমেইনের পাশাপাশি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হ্যাকারের কথা আমরা শুনি। তারা সাধারণত আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন সাইটের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকে। তাদের দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের সাইবার পুলিশ তৎপর রয়েছে। সাধারণ সতর্কতা হচ্ছে, সার্ভারের আইডি-পাসওয়ার্ড খুব দায়িত্বশীল ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত। যে পিসি দিয়ে সাইট রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয় তা সংরক্ষিত থাকা উচিত। সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তির উচিত বিষয়টি শিখে নেওয়া