জেনারেল মোটরসের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী এক দশকের মধ্যেই বাজারে ছাড়া হবে চালকহীন গাড়ি। জেনারেল মোটরস, যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী এবং অন্যান্য গাড়ি-নির্মাতা−সবাই মিলিতভাবে কাজ করে চলেছেন এমন গাড়ি নির্মাণে। স্বল্প ও দীর্ঘ দুরত্ব অতিক্রমে এটা হবে এক বিপ্লব। মাসখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কনজিউমার ইলেকট্রনিকস প্রদর্শনীতে জেনারেল মোটরসের নির্বাহী রিক ওয়াগনর তাঁর বক্তব্যে চালকহীন এ গাড়ির কথা প্রকাশ করেন।

জেনারেল মোটরসের পরিকল্পনায় রয়েছে, একটা স্বল্প দামি কম্পিউটার চিপ এবং একটা অ্যান্টেনা ব্যবহার করে চালকহীন গাড়ির প্রযুক্তিতে সংযোগ স্থাপন করা। প্রথম প্রয়োগটি হবে সম্ভবত মহাসড়কে। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চালকহীন গাড়ি প্রযুক্তির পরীক্ষা এবং ২০১৮ সাল নাগাদ সড়কে এ রকম গাড়ি নামিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। গত নভেম্বরে পেন্টাগনের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত ৬০ মাইল দীর্ঘ চালকহীন গাড়ির প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছয়টি দল। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দলের সহকারী প্রধান সেবাসটিয়ান থ্রান বলেন, জেনারেল মোটরসের লক্ষ্য কারিগরি পরিপ্রেক্ষিতে অর্জনযোগ্য। তবে তিনি মন্তব্য করেছেন যে এক দশকের মধ্যেই এ রকম গাড়ি দোকানে আবির্ভাবের বিষয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নিয়েছিল ৩৫টি দল। সেখানে দেখা যায়, আলোচিত প্রযুক্তিটি এখনো তার প্রাথমিক পর্যায় পেরোতে পারেনি। চলার সময়ে একটি গাড়ি একটা দালানে প্রায় ধাਆা দেওয়ার কারণে ওই দলটিকে বাদ দেওয়া হয়। আরেকটা গাড়ি অজানা কারণে হঠাৎ করেই একটা বাড়ির কার-পার্কে চলে যায় এবং নিজে থেকে পার্ক করে নেয়। থ্রান বলেন, প্রযুক্তিটির মূল উদ্দেশ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ হাজার মৃত্যুর হার কমিয়ে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসব দুর্ঘটনার ৯৫ শতাংশই মানবীয় ভুলের কারণে ঘটে থাকে। এই গাড়ির অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে গাড়ি চালনার কোড বা নির্দেশাবলির হালনাগাদ, যেকোনো সংঘর্ষে কে দায়ী হবে এবং টায়ার ফেটে যাওয়া বা সড়কের বাধাবিঘ্নের মতো সমস্যাগুলোকে কীভাবে সমাধান করা হবে। তবে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হতে পারে যেখানে সড়কের অবস্থা, সংঘর্ষের তথ্য বা সামনের যানজট এবং মোড়গুলোতে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হবে গাড়ির আরোহীদের। চালকবিহীন প্রযুক্তির পরের সংস্করণ, সড়কে চলমান গাড়িগুলোকে কাছাকাছি অবস্থানে নিয়ে এসে যানজট কমাতে সমর্থ হতে পারে। দেখে মনে হবে যে গাড়িগুলো চলছে ট্রেনে চেপে! এভাবে মহাসড়কের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রযুক্তিটির পেছনে তাড়া দিচ্ছে চালকদের সংঘর্ষ এড়ানোর স্বার্থে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সাহায্য করবে গাড়ির ‘গড়িয়ে গিয়ে’ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া থেকে। ২০১২ সাল থেকে নতুন আবির্ভুত মডেলের যাত্রীবাহী গাড়িগুলোতে প্রয়োজন হবে এই প্রযুক্তি। ‘গাড়ি থেকে গাড়ি’ যোগাযোগব্যবস্থা এবং মহাসড়কের সঙ্গে গাড়ির কথা বলার সুযোগ প্রদানকারী প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটবে এর পরের পর্যায়ে।