তারহীন নেটওয়ার্ক আমাদের দেশে এখনো তেমন একটা পরিচিত নয়। তবে ঢাকার কিছু কিছু হোটেল, কফির দোকানে তারহীন নেটওয়ার্ক আছে। সাধারণত এসব স্থানে যে ধরনের তারহীন যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় ওয়াই-ফাই। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে বিনামূল্যে বা কম খরচে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা হয়। ওয়াই-ফাই ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক স্থাপন সহজ এবং এতে খরচ খুব কম। ফলে যেকোনো স্থানে ওয়াই-ফাই স্থাপন করা সম্ভব।
ওয়াই-ফাই কী
তারহীন নেটওয়ার্কগুলো সাধারণত মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির মতো বেতারতরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে তারহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা দ্বিমুখী বেতার যোগাযোগের মতো। কম্পিউটারের তারহীন অ্যাডাপটর তথ্যকে বেতারতরঙ্গে রূপান্তরিত করে এবং অ্যান্টেনার মাধ্যমে সেটি প্রেরণ করে। একটি তারহীন রাউটার সেই বেতারতরঙ্গকে গ্রহণ করে এবং তরঙ্গকে রূপান্তরের মাধ্যমে তথ্য উদ্ধার করে। রাউটার থেকে সে তথ্য ইথারনেটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যায়। এ কাজটি আবার উল্টোভাবে হয়−ইন্টারনেট থেকে তথ্য রাউটারের মাধ্যমে তারহীন অ্যাডাপটরযুক্ত কম্পিউটারে পাঠায়। ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগের জন্য যে ধরনের রেডিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এগুলো অনেকটা মোবাইল ফোনের মতো। ওয়াইফাই বেতার তরঙ্গ পাঠাতে ও গ্রহণ করতে সক্ষম এবং বাইনারি সংখ্যাকে বেতারতরঙ্গ, বেতারতরঙ্গকে বাইনারি সংখ্যায় রূপান্তর করতে পারে। তবে ওয়াই-ফাই সাধারণ বেতার থেকে কিছুটা আলাদা। ওয়াই-ফাই তথ্য পাঠায় ২.৪ গিগাহার্টজ বা ৫ গিগাহার্টজ কম্পাঙ্কে (ফ্রিকোয়েন্সি)। এর কম্পাঙ্ক অনেক বেশি বলে এটি অনেক তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। ওয়াই-ফাইকে আইইইই (ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারস) ৮০২.১১ বলা হয়ে থাকে। ৮০২.১১ হচ্ছে আইইইই মান। ৮০২.১১ এ, ৮০২.১১ বি, ৮০২.১১ জি এবং সবচেয়ে আধুনিক ও সবচেয়ে বেশি যেটি ব্যবহূত হয় সেটি ৮০২.১১ এন। অন্যান্য মানের চেয়ে এর গতি ও বিস্তৃতি অনেক বেশি। এটি সেকেন্ডে ১৪০ মেগাবাইট তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। ওয়াই-ফাই মোটামুটিভাবে তিন ধরনের কম্পাঙ্কে তথ্য আদান-প্রদান করে। ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে একটি রাউটার থেকে একাধিক তারহীন যন্ত্র যুক্ত হতে পারে। তবে যদি কোনো কারণে রাউটার নষ্ট হয় বা একসঙ্গে অনেকে সংযুক্ত থাকে, তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ওয়াই-ফাই হটস্পট
যেসব স্থানে তারহীন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, সেসব স্থানকে ওয়াই-ফাই হটস্পট বলা হয়। ওয়াই-ফাই হটস্পটের সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রথমে দেখে নিতে হবে যে কম্পিউটারে সঠিক তারহীন যন্ত্র আছে কি না। বর্তমানে বেশির ভাগ নতুন ল্যাপটপ কম্পিউটারে ওয়াই-ফাই যন্ত্র থাকে। আলাদা করে কিনতে হয় না। বিভিন্ন রকম তারহীন অ্যাডাপটর বাজারে পাওয়া যায়। তারহীন অ্যাডাপটর কম্পিউটারে যুক্ত করার পর কম্পিউটার যেকোনো ওয়াই-ফাই হটস্পটের নেটওয়ার্কের কাছাকাছি গেলে তা নিজ থেকেই সে নেটওয়ার্ককে চিনে নেবে এবং ব্যবহারকারীর অনুমতির জন্য অপেক্ষা করবে।
তারহীন নেটওয়ার্ক তৈরি
যদি কোনো অফিস বা বাসায় তারযুক্ত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা থাকে, তবে সহজেই ‘অ্যাকসেস পয়েন্ট’ বসিয়ে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। আর যদি আগে থেকে কোনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তবে একটি তারহীন রাউটারের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। একটি তারহীন রাউটারে কেব্ল বা ডিএসএল মডেম স্থাপন করার জন্য পোর্ট থাকে। রাউটার, ইথারনেট হাব, ফায়ারওয়াল এবং একটি তারহীন অ্যাকসেস পয়েন্টও থাকে। বেশির ভাগ রাউটার ৩০.৫ মিটার পর্যন্ত জায়গায় যেকোনো দিকে কাজ করতে পারে। তবে রেঞ্জ এক্সটেঞ্জার বা রেঞ্জ বাড়ানোর যন্ত্র দ্বারা খুব সহজেই ওয়াই-ফাইয়ের বিস্তৃতি বাড়ানো যায়। সাধারণ গণ-নেটওয়ার্কের আলাদা নিরাপত্তার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক-ব্যবস্থার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।
এমএসি (মিডিয়া অ্যাকসেস কন্ট্রোল)
প্রতিটি কম্পিউটারের একটি আলাদা হার্ডওয়্যার পরিচিতি থাকে, একে ম্যাক (মিডিয়া অ্যাকসেস কন্ট্রোল) বলা হয়। এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ম্যাক ঠিকানা দিয়ে কম্পিউটারকে শনাক্ত করা যায়। তারহীন রাউটারে যেসব কম্পিউটারের ম্যাক ঠিকানা দেওয়া থাকে, শুধু সেসব কম্পিউটার নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারে।