১ জুন হতে ২৪০ জন লোক বহনকারী এয়ারপ্লেন তার টিকেট ব্যবস্থার রূপ বদলালো। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা কাগজের টিকেটের পরিবর্তে এখন ইমেইলে টিকেট ক্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার ৯৪% সদস্য গত ফেব্রুয়ারিতেই কাগজে বিমান টিকেট ব্যবস্থা হতে সরে এসেছে। আর এই জুনের প্রথম রবিবারে স্থায়ীভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে টিকেট বিক্রয় শুরু হলো।
গত শনিবারেই সর্বশেষ কাগজের টিকেট বিক্রয় হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা তার এয়ার লাইন সদস্যদের জন্য এমন এক ব্যবস্থার প্রণয়ন করল যা তাদের জ্বালানী খরচের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আই এ টি এ তার সদস্যদের জন্য তিন বিলিয়ন ডলার (১.৯ বিলিয়ন ইউরো) বাচাবে।
একজন আই এ টি এ এর বক্তা বলেছেন, ‘পহেলা জুন হতে কোন ট্রাভেল এজেন্সীই কাগজের টিকেট প্রণয়ন করতে পারবেনা কিন্তু পুর্বে প্রণয়ন করা কাগজের টিকেট গুলো নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।’ যেখানে একটি কাগজের টিকেটের খরচ পড়তো ১০ ডলার সেখানে একটি ইমেইল এয়ারটিকেট করতে গড়ে ১ ডলার খরচ হবে। আই এ টি এ আরও হিসাব করে দেখেছে এই ব্যবস্থা ৫০,০০০ হাজার গাছও বাঁচাবে। কাগজের টিকেট বিলুপ্ত বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন সংস্থার প্রধান বলেছে মে মাসের শেষে কাগজের টিকেট বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
মন্ট্রিয়ালের একটি সংবাদ সম্মেলনে আই এ টি এ- এর সাধারণ সম্পাদক জিওভানি বিসিগনানি বলেছেন, ‘আপনি কাগজের টিকেটকে যাদুঘরে রাখেন। কেননা ২৫০ দিন পর এই সেবা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।’
কাগজের টিকেটের পরিবর্তে ইমেইলে টিকেট এমনভাবে আসবে যা প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলার বাঁচাবে। এছাড়া আমেরিকার বাহিরে ৪০০ মিলিয়ন টিকেট বিশৃঙ্খলভাবে থাকবে। সাধারণদের ধারনা এটি খুব মারাত্বক কথা যে পূর্ণ অর্থ পরিশোধের বিপরীতে কোন টিকেট হাতে হস্তান্তর করা হবে না। মন্ট্রিয়াল এবং জেনেভার কয়েকজন বক্তা বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি যে, এয়ারপোর্টে প্রবেশের জন্য একটি কুপন প্রদর্শন করা হবে।’ যখন আমরা ২০০৪ সালে এই ইলেকট্রনিক পরিকল্পনার কথা বলেছিলাম তখন বড়রকম তোপের মধ্যে পড়েছিলাম। লোকজন বলতো ‘তোমরা এটা করতে পারবেনা।’ একটি ইলেকট্রনিক টিকেট বিতরণ করতে যাত্রীবাহী বিমানও ট্রাভেল এজেন্টদের যেখানে ১ ডলার খরচ হবে সেখানে কাগজের টিকেট ব্যবস্থায় আরও ৯ ডলার বেশি অর্থ ব্যয় হবে। সারা বিশ্বেই বিমান টিকেট হিসাবে কুপন ব্যবহার করা হবে যা বাস্তবসম্মত নয়। মিঃ উইলসন বললেন আমি এটি কল্পনাও করতে পারছিনা যে, একজন এয়ারলাইন সম্পাদক কিভাবে বুঝবে যাত্রীর দেয়া তথ্য সত্য। তাই চোর, বাটপার ও জালিয়াতির হাত হতে বাচতে খুব যতœ সহকারে টিকেটের ফাঁকা জায়গা গুলো পূরণ করতে হবে। সম্ভবত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেই কাগজের টিকেট আইনকে পুনবিবেচনার জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অবশ্য, সকল যাত্রীবাহী বিমানের জন্যই এটি সুখকর হবেনা। উদাহরণস্বরূপ, লামু দ্বীপ ও কেনওয়ার নাম বলা যেতে পারে। যেখানে বিদ্যুৎই নেই সেখানে কম্পিউটার, এটি কল্পনার বাইরে। তাই যাত্রীদের তালিকা বের করতে মেইনল্যান্ড যেতে হবে এবং সেগুলো নৌকার মাধ্যমে বিমানবন্দর পাঠাতে হবে। এটি হাস্যকরই বটে।
কাগজ ও ইলেকট্রনিক টিকেটের পার্থক্য
দুধরণের বিমান টিকেট আছে। যার একটি কাগজের এবং অন্যটি ই-টিকেট যাকে টিকেটবিহীন যাত্রাও বলা যেতে পারে। কাগজের টিকেট দেখে যে কেউ তা সহজেই বুঝতে পারবে এবং ভারী হবে।
কাগজের টিকেটে মূলত ফ্লাইটের পূর্ণ বিবরণ থাকে। যেমন ফ্লাইটের সঠিক তথ্য এবং ফ্লাইট কুপনের লেবেল দেয়া থাকে। কাগজের টিকেটের আরও একটি উপকারিতা আছে তা বাতিল না করা হলে। তারা বলে আপনার গন্তব্যের সময় পরীক্ষা করুন এবং একই সময়ে অন্য এয়ারলাইন্স হতে সর্বোচ্চ সেবা পান। একটি এয়ার টিকেটই এই কাজ করতে পারে।
ই-টিকেট হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যা আপনার হাতে কোন প্রকার কাগজ না দিয়ে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে আপনাকে সর্বোচ্চ সেবা দেবার চেষ্টা করবে। তাই আপনাকে অবশ্যই কাগজের টিকেট ও ই-টিকেটের স্পষ্টতা ও অস্পষ্টতাগুলো নির্বাচন করতে হবে।
যখন একটি এয়ারলাইন্স তার যান্ত্রিক সমস্যার কারণে তার ফ্লাইট বাতিল করে তখন সে সুবিধামত সময়ে অন্য আরেকটি এয়ারলাইন্সকে ডাকে এবং যাত্রীরা সহজেই তাদের টিকেটকে রূপান্তর করতে পারে। তবে সেটা শুধুমাত্র দেশের ভিতরে। একটি চার্টার টিকেটের ক্ষেত্রে এই রূপান্তর সম্ভব নয়। তবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রেও এটি করা যেতে পারে যদি তা সঠিকরূপে এয়ারলাইন্সের নিকট প্রদর্শন করা যায়। এক্ষেত্রে একটি অকথিত নিয়ম আছে। যদি যাত্রী মূল এয়ারলাইন্স কর্তৃক অনুমিত হয় তবে অবশ্যই তার টিকেটকে রূপান্তর করতে পারবে। যদি যাত্রীর তার কাগজপত্র সঠিক তথ্যের টিকেট দেখাতে পারে তবে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষই তাকে স্কুপ করতে বলে। যখন যাত্রীরা তাদের টিকেট অন্য একটি এয়ার লাইনকে দেয় আর যদি এয়ারলাইন তাদের লাভের আশায় তা গ্রহণ করে তবে তাকে স্কুপিং বলে। তবে এর বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কিছু অর্থ গ্রহণ করে থাকে।
ইলেকট্রনিক টিকেটের জন্য সুসংবাদ
ইলেকট্রনিক টিকেট হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা কিনা কখনও চুরি বা হারিয়ে যাবে না। যদিও দলিল হারানো যায় তবে বিমানবন্দর হতে তা আবার পুণরায় ছাপিয়ে দেয়া হবে। ইলেকট্রনিক টিকেট এই সমস্যাগুলোর বিপরীতে অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি পথ। সত্যিই আশ্চর্যের ব্যাপার হল অনেক লোকজনই আছে যারা বাড়িতে অথবা অফিসে তার টিকেট রেখে চলে আসে। আর সেজন্যই তারা তাদের টিকেটটি পুণরায় নেয়। যার বিনিময়ে তারা কিছু পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যয় করে। যাকে ডিসকাউন্ট টিকেট বলে। আর একটি নতুন টিকেট কিনলে তাকে ফুল ফেয়ার টিকেট বলা হয়ে থাকে। ভুলে যদি আপনি আপনার টিকেট বাড়িতে কিংবা অফিসে ফেলে চলে আসেন। সেক্ষেত্রে একটি ই-টিকেট আপনার দুশ্চিন্তা দূর করতে পারবে। টিকেট নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সে টিকেটকেই বাছাই করতে হবে যে টিকেট ব্যবস্থাকে আপনি কার্যকরী ভাববেন। যদিও কাগজের টিকেট বিমান রীতিনীতি অফিসের জন্য অত্যন্ত আরামপ্রদ। তারপরও ভাবুন- ‘চিকেন অথবা বিফ’ এরা একই স্বাদের আর ‘ই-টিকেট ও কাগজের টিকেট’ একই কাজের।
এয়ারলাইন্স প্রদত্ত বিমানবন্দরের বোর্ডিং পাস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তারপর টিকেটের সাথে বোর্ডিং পাসটি সংযুক্ত করলেই কেবল বিমানে উঠার জন্য যাত্রী অনুমতি পায়। অবশ্য পণ্য বহনের জন্য একজন যাত্রীকে অতিরিক্ত মাসুল দিতে হয়। অনেক এয়ারলাইন্সেরই দীর্ঘকালীন টিকেট নেই। আই এ টি এ ঘোষণা করেছে ১লা জুন হতে কোন এয়ারলাইন্সই দীর্ঘকালীন টিকেট বিক্রয় করতে পারবেনা।
কাগজের টিকেট অনেক ভাল কারণ এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। কারণ একটি এয়ারলাইন্স অন্য আরেকটি এয়ারলাইন্সের টিকেট গ্রহণ করতে পারে এর সিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে।
কোন নির্দিষ্ট ফ্লাইটের জন্য সাধারণত কাগজের টিকেট ব্যবহার করা হয়। ভ্রমণের জন্য ‘ওপেন’ টিকেট ক্রয় করতে হবে। যাতে গন্তব্যস্থলগুলো সম্পর্কে পূর্ণ বিবরণ দেয়া থাকবে। নির্দিষ্ট ফ্লাইট সাধারণভাবেই ওপেন টিকেটের চাইতে ব্যয় বহুল। কিছু টিকেট অফেরতযোগ্য। সাধারণত কমদামি টিকেটগুলোই অফেরতযোগ্য এবং এগুলোতে প্রচুর বাধ্যবাধকতা থাকে। টিকেটের জন্য এক বা একাধিক কুপন তৈরি করতে হয়। আর এই কুপনগুলোই ভ্রমণের সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিটি পদক্ষেপেই এই কুপনগুলো ব্যবহার করতে পারবে।
কাগজের টিকেটে ভ্রমণ ও মালপত্র বহনের ইতিহাস
ই-টিকেটের বদৌলতে ১লা জুন হতেই ঐতিহ্যবাহী কাগজের টিকেটের অধ্যায় চুকে গেল। এটি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেবার জন্য অন্যতম পথ হিসাবে বিবেচিত হবে। একটা সময় ছিল যখন টিকেটের জন্য লম্বা লাইন কিংবা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন আপনি একটি ইমেল পাঠিয়েই একটি বিমান টিকেট পেতে পারেন। এই জুনের প্রথম দিন হতে আই এ টি এ এর অনেক সদস্যই ই-টিকেট পদ্ধতিতে ৯৪% টিকেট বিতরণ করছে। দক্ষিণপশ্চিম আমেরিকার ইজিজেট এবং রিয়ানাইর কাগজের টিকেটের চেয়ে কাগজছাড়া টিকেট দিতেই বেশি আগ্রহবোধ করছে। পশ্চিম লন্ডনের একজন ভ্রমণকারীর কথা স্মরণ করা যেতে পারে। যিনি কেঁদে কেঁদে বলেছিল, ‘আমি আমার টিকেট প্যান্টের পকেটে রেখেছিলাম এবং প্যান্ট পরিস্কারের সময় তা নষ্ট হয়ে গেছে। এটা কোন ঘটনা হলো?’ সে উত্তপ্ত হয়ে সাইকেল দিয়ে অকল্যান্ড চলে গিয়েছিল।
যখন আমি আমার হারিয়ে যাওয়া টিকেটের জন্য পুণরায় আবেদন করবো তখন তার উত্তর না বোধক হবে। আর যদিও হ্যাঁ হয় তবে পুণরায় ফরম পূরণ করতে হতো, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হতো, কুরিয়ার ব্যবস্থা করতে হতো এবং দাঁত কড়মড়ানিও দেখতে হতো।
ট্রেইলফাইন্ডারস্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক একজন মহিলার কথা স্মরণ করে বললো- সে তার স্বামীর অসুস্থার কারণে তার ফ্লাইট বাতিল করলো এবং পরবর্তীতেই তা প্রণয়ণ করা হয়েছিল। ফলে সে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে পারল।
কাগজের টিকেটের মাঝে ব্যবহৃত কোড দেখে আমি বরাবরই আন্দোলিত হতাম। কারণ এর কোড অত্যন্ত কঠিন। যেমন- ইকোনমিকে প্রকাশ করা হচ্ছে ওয়াই দ্বারা। এছাড়া এন, এল, কিউ, ডব্লিউ অথবা আর।
টিকেটে কাগজের ব্যবহার রহিত হলো
এয়ারলাইন্সে কাগজ ব্যবহারের ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গত চার-বছরেই এই দীর্ঘ ইতিহাসের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে গেল। সরানো হলো কাগজের টিকেট তৈরি কারকদের। সারাবিশ্বে ২০০ বেশি দেশ এই ই-টিকেট পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত হলো। ধীরে ধীরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। ছোট বইয়ের পাতলা কাগজের কুপনের দিন একদিন শেষ হবে। আই এ টি এ- এর ট্রেড বডির বক্তা বলেছেন, ‘অতিশীঘ্রই ৩০০ দেশই ই-টিকেট পদ্ধতিতে টিকেট বিক্রয় শুরু করবে।’ এক হাজার টিকেটের মধ্যে কিছু যাদুঘর ও কিছু শরণার্থীর জন্য ব্যবহার করা হবে। প্রচুর লোকই ই-টিকেট পদ্ধতিকে সাদরে গ্রহণ করে নিচ্ছে ফলে এর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
ব্রিটিশ এয়ারলাইন্সের টিকেট কিনতে ৫৫% লোকই নধ.পড়স ওয়েব সাইটটি ব্যবহার করে থাকে। অন্যান্য তথ্য জানতে বীঢ়বফরধ.পড়স ওয়েবসাইটটি ব্যবহৃত হয়। তারা ছাপানোর জন্য একটি চেক নম্বর দেয়। অনেকে আবার বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করে ফেলে। বোর্ডিং পাসটি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। কেননা ট্রাভেল এজেন্সীগুলোও বোর্ডিং পাসের এক কপি বের করে চেক করে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েস নসর দ্বারা পরীক্ষামূলক টিকেট বিতরণ শুরু করেছে। ১৯৩৩ সালে এভাবেই মূল কাগজ টিকেট প্রণীত হয়েছিল। এটা শুধু যাত্রীদের বোঝার জন্যই প্রণীত হয়েছিল না। এতে ভ্রমণের কিছু শর্তও দেয়া হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে কিছু নতুন বিষয় সংযুক্ত করে তা পুণরায় উন্নত করা হয়েছিল।
এয়ারলাইন্সগুলো বিশ্বাস করে কাগজের টিকেট বর্জনের ফলে একটি কারখানার প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন ডলার বেচে যাবে। যা তারা ২৮৫ মিলিয়ন ডলার টিকেট বানাতে খরচ করতো।



