পূর্বে অনেকের মধ্যে বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটু ভুল ধারণা প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, মোবাইল ফোনের বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রেন ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়। সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মোবাইলফোন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রেন ক্যান্সারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। জাপানের টোকিও ওমেন্স মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এই গবেষণা জরিপে জানানো হয়েছে সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্রেন ক্যান্সারের কোন ঘটনা এই পর্যন্ত ঘটেনি। উল্লেখিত গবেষণায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ৩২২ জন ব্রেন ক্যান্সারের রোগী এবং ৬৮৩ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির উপরে পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় আরো জানানো হয় যে, ব্রেন ক্যান্সারের মূলত ৩টি ধাপে অর্থাৎ গ্লিওমা, মিনিংগোমা এবং পিটুইটারি এডিনোমা কোনোটির সাথে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোন সম্পর্ক নেই। ব্রেন ক্যান্সারের উল্লেখিত তিনটি ধাপের সাথে মোবাইল ব্যবহারের কোনো সম্পর্ক না পাওয়ায় পূর্বেকার বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রেন ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। এই গবেষণাতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার এবং বিভিন্ন বয়সের মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের উপর গবেষণা চালানো হয় যার বিষয়স্তুর মধ্যে রয়েছে, ব্যবহারকারীরা কতক্ষণ যাবত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং কত বছর যাবত তারা মোবাইলে কথা বলে। একই সাথে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন মোবাইল ফোনের সেটসমূহের কার্যক্ষমতা এবং ব্যবহারকারীদের নিকট গ্রহণযোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সেই সাথে মোবাইল ফোন ব্যবহারের পদ্ধতি এবং রেডিয়েশনের বিভিন্ন কার্যকারীতা পরীক্ষা করে দেখা হয়। টোকিও ওমেন্স মেডিকেল ইউনিভার্সিটির মূখ্য গবেষণক প্রফেসার নাওহিত ইয়ামাগুচি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ব্রেন ক্যান্সারের কোন ঝুঁকির প্রমাণ আমরা পাইনি। আমাদের এই গবেষণাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা মোবাইল ফোন এবং ক্যান্সারের মধ্যে কোন সাদৃশ্য খুঁজে পাইনি। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবহারকারীরা মোবাইল ফোন স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারবে বলে আমার ধারণা।’ পূর্বেকার বিভিন্ন গবেষণায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রেন ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাবনাকে উল্লেখ করা হয়েছিল। যার ফলে সারাবিশ্ব জুড়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই বিষয়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সদ্য গবেষণার ফলাফল বিশ্বজুড়ে মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই প্রসঙ্গে ড. লেসলে ওয়াকার বলেন, ‘সারাবিশ্ব জুড়ে পরিচালিত গবেষণায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেক রোগের সম্ভাবনা উল্লেখ করা হলেও এই পর্যন্ত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে ব্রেন ক্যান্সার হবার কোন সম্ভাবনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ব্রেন ক্যান্সারের মূল একটি ধাপ হিসেবে গ্লিওমা’কে বিবেচিত করা হয়ে থাকে এবং এটি মাথার এক পাশে হয়ে থাকে যার কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে এটি হতে পারে বলে অনেকের মধ্যেই ধারণা ছিল। কিন্তু গবেষণার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে ব্রেন ক্যান্সার বিশেষ করে গ্লিওমা হবার কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি।’ সদ্য প্রকাশিত এই গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে নিঃসন্দেহে।