কম্পিউটার তার চৌকোনা বাক্সের ফ্রেম থেকে বেরিয়ে আসছে, জুড়ে যাচ্ছে আপনার আমার লাইফস্টাইলের সাথে। অবাক হলেও সত্যি, আমরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং এর যুগে। ফিল্ম পরিচালক, জ্যেতির্বিদ, অভিনেতা, প্রকৌশলী এবং গেমাররা মিলে সম্প্রতি সিলিকন ভ্যালীর প্রাণকেন্দ্রে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এনভিশন কনফারেন্সে কম্পিউটার ইমেজারির অগ্রসরতা নিয়ে তাদের নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মানুষ এবং যন্ত্রের ভাব বিনিময় কতটুকু সহজ করা যায় তাই ছিল কনফারেন্সের মূল আলোচিত বিষয়।
‘ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রিকে বদলে ফেলছে, পাল্টে যাচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, এমনকি রিয়েল টাইম টেলিভিশন দেখার বিষয়টিও পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে’ বলেন এনভিডিয়া কো-ফাউন্ডার জেন সুন হুয়াং। ‘আমরা দুনিয়া জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ চ্যালেঞ্জিং সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছি। এখন অপেক্ষা ভিজুয়াল কম্পিউটিং যুগের।’
আপনার মনে হতে পারে এই প্রযুক্তিতে শুধুমাত্র গেমাররা উপকৃত হবেন, ভিজুয়াল মিডিয়ার সাথে জড়িত এবং পণ্যের উৎপাদন ও বিপননে সবার জন্যই এই প্রযুক্তি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করবে।
কার মেকাররা ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী তাদের জন্য গাড়ি ডিজাইন করতো কাস্টোমাইজ অটোমোবাইল সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কিন্তু এখন ভিজুয়াল কম্পিউটিং এ সম্পূর্ণ গাড়িটিকে বিভিন্ন এঙ্গেলে দেখার পাশাপাশি টেস্ট ড্রাইভও সেরে নিতে পারবেন। গ্রাফিক্স প্রসেসিং ফাইনেন্সিয়াল মডেলিং এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষনেও সহায়তা দিবে। ইসরায়েল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অপটিটেক্স এই প্রযুক্তিতে নতুন এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব বয়ে নিয়ে আসবে। গার্মেন্টস তৈরির আগে ডিজাইনাররা কাপরের ডিজাইন সরাসরি দেখতে পারবে এবং তা গায়ে চড়িয়ে কেমন লাগবে ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাও যাচাই করে নিতে পারবেন। অপটিটেক্স এনিমেশন সফটওয়্যার এখন হলিউড ফিল্ম মেকারদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। ড্যাসল্ট সিস্টেম তৈরি করেছে থ্রিডি কম্পিউটার এসিস্টেড ডিজাইন যা দিয়ে ভার্চুয়ালি প্যাসেঞ্জার জেট, দালান-বাড়ি, সেতু ইত্যাদি ডিজাইন করা যাবে। ‘এটি হবে আমাদের স্বপ্ন এবং ডিজাইনে এক নতুন পন্থা, আমাদের শিল্পকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে এটি একটি মাধ্যম’, বলেন এনভিশন, ফ্রেঞ্চ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা বার্নাড চার্লস।
আমরা আমাদের নিত্য জীবনে যা করি, চিন্তা করি সবকিছ্ইু প্রভাবিত হবে এই প্রযুক্তিতে: শিক্ষা, বিজ্ঞান, কথা বলাঃএবং অবশ্যই গেম। গবেষনায় জড়িত সবাই সিমুলেশন শব্দটির সাথে পরিচিত। একটি সিস্টেম ফাইনালি ডেভেলপ করার আগে তার মতো প্রটোটাইপ ডিজাইন করে দেখা হয় সেটি কাজ করে কিনা। এভাবে মূল বিষয়টি বানানোর আগে চলে কয়েক দফা সিমুলেশন স্টেজ। ভাচুর্য়াল কম্পিউটিং এর মাধ্যমে এই সিমুলেশন হবে আরো সহজ এবং সাধারন পাঠ্য। ফাইনাল প্রডাকশনে যাওয়ার পূর্বে ভাচুর্য়ালি তা সম্পর্কে পূর্ব ধারনা পাওয়া যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। চালর্স বলেন সিমুলেশনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি হবে আরো রিয়েলিস্টিক, ভাচুর্য়াল একটিভিটি দেখে মনে হবে আয়নায় প্রতিফলিত বাস্তব দুনিয়া।
স্পেস শাটল মিশনে সিমুলেটর ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মহাকাশে যাওয়ার আগেই মহাকাশযাত্রীদের প্রশিক্ষন দেয়া হয় এই সিমুলেশনের মাধ্যমে। যখন সত্যিই আপনি কোন মিশনে যাবেন তখন মনে হবে যেন সিমুলেটরে আছেন, ভালো ভিজুয়াল গ্রাফিক্স ছাড়া এটি সম্ভব হতো না, বলেন প্রথম মহিলা শাটল কমান্ডার ইলেন কলিনস।
‘ভিজুয়াল কম্পিউটিং ছাড়া আগামী দুনিয়া অসম্ভব।’ ‘আমরা প্রতিক্ষেত্রেই প্রদর্শন করছি, এটি শুধুই কম্পিউটারের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, প্রয়োজনটা সর্বত্র। এটি এখন যতটুকু না কম্পিউটেশন তারচেয়ে বেশি মানুষ কিভাবে প্রেজেন্ট করে এবং কিভাবে তা দেখতে চায়।’
শুরুটা ভিডিও গেম থেকে হলেও এখন ডিজিটাল ভিডিও, ফটো, ফিল্ম এবং টেলিভিশনের জোয়ারে গ্রাফিক চিপ, কার্ড এবং সফটওয়্যার উৎকর্ষিত হচ্ছে। মানুষ চাইছে পরাবাস্তব দুনিয়ার অনুভূতি এই বাস্তব দুনিয়ায়। রিয়েল লাইফ এনিমেশন, ভাচুর্য়াল কম্পিউটিং এখন সময়ের প্রয়োজন মাত্র। তাই সময়টা পারসোনাল কম্পিউটিং এর নয়, এটি ভার্চুয়াল কম্পিউটিং।