এক ধরনের সমুদ্র-স্পঞ্জ তাদের শরীরের ভেতর আলোক-তরঙ্গ প্রবাহিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এটাকে বলছেন প্রকৃতির ফাইবার অপটিক কেব্ল!স্পঞ্জ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সরল প্রাণী। কিন্তু এদের মধ্যে এ ধরনের আলোক প্রবাহের কায়দা দেখে বিজ্ঞানীরা অভিভুত হয়ে পড়েছেন। জার্মান একটি গবেষক দল এই সামুদ্রিক স্পঞ্জ খুঁজে পান। তাঁদের গবেষণালব্ধ তথ্য ছাপা হয় এক্সপেরিমেন্টাল মেরিন বায়োলজি ও ইকোলজি জার্নালে।গবেষকেরা বলেন, প্রাণীরা স্মায়ুকোষের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে। কিন্তু এই সমুদ্র-স্পঞ্জগুলোই একমাত্র প্রাণী, যারা এদের শরীরের ভেতর দিয়ে আলোক-তরঙ্গ প্রবাহিত করতে পারে।স্পঞ্জ সাধারণত সমুদ্রে পাওয়া যায়। এগুলো একেবারেই আদি প্রাণী। এদের মাংসপেশি, স্মায়ু ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ নেই। স্পঞ্জগুলোর প্রধান দুই জাতের বহিরাবরণ সিলিকা বা কাচের দন্ড দিয়ে তৈরি। গবেষণায় দেখা গেছে, আলো এই কাঠামোগুলোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। স্পঞ্জগুলো ভেতরের কাচের রড দিয়ে আলো প্রবাহিত করতে পারে।বিজ্ঞানীরা ক্রোয়েশিয়া উপকুলের অগভীর পানি থেকে স্পঞ্জগুলো সংগ্রহ করে সমুদ্রের পানি ভরা জলাধারে নেন। এরপর তাঁরা অন্ধকার পরিবেশে স্পঞ্জগুলোর নিচে আলোক সংবেদী কাগজ রাখেন। স্পঞ্জগুলো কিছু সময়ের জন্য আলোতে আনা হয়। এরপর বিজ্ঞানীরা যখন আলোক সংবেদী কাগজটি পরীক্ষা করেন, তখন দেখেন এটি অসংখ্য বিন্দুতে পরিপূর্ণ। প্রতিটি বিন্দু আলো বের হওয়ার পথ নির্দেশ করেছে। স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্রাঞ্জ ব্রুমার জানান, আদিম এই স্পঞ্জদের এখন অবিশাস্য প্রাণী হিসেবে মনে হচ্ছে। তাদের মধ্যে আরও অনেক আলোকপ্রবাহের এ ক্ষমতা দেখে বিজ্ঞানীরা অভিভুত হয়ে পড়েন। নতুন আরও কত কিছু না জানি তাদের মধ্য থেকে আবিষ্ককৃত হয়!ফ্রাঞ্জ ব্রুমার জানান, কোনো কোনো স্পঞ্জ কেন এত বড় হয়, তা এবার বোঝা গেল। বৃদ্ধির জন্য স্পঞ্জের প্রয়োজন কার্বন, নাইট্রোজেনসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এগুলো এদের সরবরাহ করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণিকণা, যেগুলো এদের ভেতরে থাকে। এগুলোর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন আলো, যা বিস্নয়কর উপায়ে শরীরের ভেতর দিয়ে সরবরাহ করে এই স্পঞ্জগুলো।