আজকাল পিটুপি (P2P) বা পিয়ার টু পিয়ার শব্দটি প্রায়শই বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে দেখা মেলে। পিটুপি আসলে এক ধরনের কম্পিউটারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগব্যবস্থা, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে। এ ব্যবস্থার কল্যাণে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে বিভিন্ন ফাইল অংশীদারির ভিত্তিতে আদান-প্রদান করা যায় কোনো রকম কেন্দ্রীয় সার্ভার ছাড়াই। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল কম্পিউটার-বিজ্ঞানী আরেকটি নতুন যোগাযোগব্যবস্থা আবিষ্ককার করেছেন, যার ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহারের কার্যকারিতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থাকে অভিহিত করা হচ্ছে পিফোরপি বা প্রোভাইডার পোর্টাল ফোর পিটুপি অ্যাপ্লিকেশনস।বিজ্ঞানীরা জানান, ১০ বছর ধরে বিভিন্ন আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠানগুলো যে গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে, তার বেশির ভাগই ব্যয় হয় বিভিন্ন রকম ফাইল স্থানান্তরের পেছনে। তবে ১৯৯৮ সালের দিকে এ ধরনের ইন্টারনেট ট্রাফিকের হারে কিছুটা হলেও পরিবর্তনের দেখা পাওয়া যায় পিটুপি সফটওয়্যার প্রযুক্তি আবিষ্ককারের কল্যাণে। বিভিন্ন ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে সাধারণ ব্যবহারকারীরা পিটুপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ রকম ফাইল স্থানান্তরের হার শতকরা ১০ থেকে ৭০ ভাগ বেড়ে যায়। এক গবেষণায় জানা গেছে, ইন্টারনেট ট্রাফিকের শতকরা ২০ ভাগ ওয়েব পরিভ্রমণের কাজে এবং ১০ ভাগ মাত্র ব্যবহূত হয় ই-মেইল লেখা ও আদান-প্রদানের কাজে।ইয়েল কম্পিউটার-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এভি সিলবারশার্জ, ওয়াই রিটার্ড ওয়াং এবং পিএইচডি গবেষণার ছাত্র হাইওয়াং জাই−এই তিনজন গবেষক মিলে যৌথভাবে নতুন পিফোরপির নকশা দাঁড় করাচ্ছেন। পিফোরপি শব্দটি এসেছে (প্রোভাইডার পোর্টাল ফোর পিটুপি অ্যাপ্লিকেশনস)। এই প্রযুক্তির কল্যাণে বিভিন্ন আইএসপি এবং পিটুপি ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সহায়ক ও কার্যকর ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি বাড়তি গতি আসবে।পিফোরপি গবেষণা প্রবন্ধ সম্প্রতি উপস্থাপন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অনুষ্ঠিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের এক সম্মেলন ‘এসিএম সিগকম ২০০৮’-এ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, এই নতুন পিফোরপি প্রযুক্তিব্যবস্থা আইএসপিগুলোর খরচ কমানোর পাশাপাশি পিটুপি অ্যাপ্লিকেশনসের কার্যকারিতা বাড়াবে। অধ্যাপক সিলবারশার্জ বলেন, ‘বর্তমানে প্রচলিত এই পিটুপি অ্যাপ্লিকেশনগুলো বলা চলে নেটওয়ার্ক-বিস্নৃতিপরায়ণ। পাশাপাশি এগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও অকার্যকর। যেমন আপনি দুরের প্রতিবেশীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন কিন্তু খরচ হচ্ছে দুজনের।’বর্তমানে এই গবেষক দল কাজ করছেন যেন এই প্রযুক্তিব্যবস্থায় আরও বেশি কোনো যন্ত্র ও সুবিধা যোগ করা যায়। গবেষক সিলবারশার্জ আরও বলেন, ‘বর্তমানে আইএসপি এবং পিটুপি সেবাদাতা কোনো সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন একসঙ্গে, তবে একে অপরের পায়ে মাড়িয়ে! আমরা চাইছি এমন একটি উন্নুক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে, যেন আইএসপি ও পিটুপি উভয় প্রতিষ্ঠানই লাভবান হয়।’ উল্লেখ্য, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণার পেছনে অর্থ জোগান দিচ্ছে এবং ২০০৭ সাল থেকে এই গবেষণা দল যৌথভাবে এ কাজ করছে। দলটির সঙ্গে আরও ৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে পান্ডো, ভেরিজনের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এই পিফোরপির নকশাকে আরও বৃদ্ধি করা যাবে আইট্রাকারের মতো সার্ভার যুক্ত করে। এই সার্ভারগুলো আইএসপি নেটওয়ার্ককে আরও সক্রিয় করে তুলবে।এই পিফোরপি প্রযুক্তি দুটি ভিন্ন মোডে কাজ করতে পারবে। পিফোরপির সাধারণ মোডে পিটুপি অ্যাপ্লিকেশনসগুলো তাদের হট-স্পট বর্জন করে চলতে পারবে। অন্য একটি মোডে এই পিফোরপি অ্যাপ্লিকেশনকে শেয়ারবাজারের স্টক একচেঞ্জের মতো করে ব্যবহার করা যাবে। ফলে যোগাযোগ বাড়বে কিন্তু এর ব্যয় কমে যাবে অনেক গুণ। পরীক্ষামূলকভাবে গত মার্চে পিটুপি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান পান্ডোতে এই পিফোরপি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে দেখা গেছে, আন্ত-আইএসপিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ইন্টারনেট ট্রাফিক কমে গেছে শতকরা প্রায় ৩৪ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে শেষ প্রান্ত (এন্ড) ব্যবহারকারীরা স্থানান্তর গতি পেয়েছেন শতকরা ২৩৫ ভাগ এবং আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের ব্যবহারকারীরা পেয়েছেন শতকরা ৮৯৮ ভাগ!গবেষকেরা আশাবাদী, এটিঅ্যান্ডটি, কমক্যাস্ট, টেলিফোনিকা, ভেরিজনের মতো খ্যাতনামা আইএসপি প্রতিষ্ঠান এবং পান্ডো যদি এই পিফোরপি সফটওয়্যার ব্যবহারে নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখে, তাহলে ভবিষ্যতে এই পিফোরপি প্রযুক্তি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের জগতে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভুমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে।