বিদ্যুৎ পরিবাহী (কনডাকটর), অর্ধপরিবাহী (সেমিকনডাকটর) ইত্যাদি পদার্থের কথা কমবেশি সবাই শুনেছেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক চিপ তৈরি করা হয় সেমিকনডাকটর দিয়ে। এবার কনডাকটর-সেমিকনডাকটরের পাশাপাশি এসেছে নতুন প্রযুক্তির সুপার কনডাকটর। সাধারণত সেমিকনডাকটর বিদ্যুৎ পরিবহন করে না, তবে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এসব পদার্থের মধ্য দিয়েও বিদ্যুৎ পরিবহন করানো যায়। তাপমাত্রা কমিয়েদিলে এগুলো বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। এ সময় এসব পদার্থের রোধ থাকে অনেক কম। ফলে মোটামুটি কোনো রকম বাধা ছাড়াই এসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পরিবহন সম্ভব। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নতুন ধরনের সুপার কনডাকটর তৈরি করেছেন। এ সুপার কনডাকটর তৈরি করা হয়েছে আয়রন আরসেনাইড দিয়ে। এ পদার্থের ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রা অন্যান্য পদার্থের চেয়ে অনেক বেশি। ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রা হচ্ছে সেই তাপমাত্রা যে তাপমাত্রায় একটি মৌলিক পদার্থ সুপার কনডাকটরের বৈশিষ্ট্য লাভ করে। এটি তৈরির ফলে গবেষকদের সুপার কনডাকটর-ভিত্তিক গবেষণা আরও প্রসারিত হবে। নতুন ধরনের এ পদার্থ ব্যবহার করে কম খরচে এমআরআই মেশিন, হালকা তার ও অনেক কম শক্তির পাওয়ার গ্রিড তৈরি করা হয়। এ ছাড়া সুপার কনডাকটিং চুম্বকের দ্বারা শক্তি সঞ্চয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সুপার কনডাকটর পদার্থ কোনো রকম শক্তি ক্ষয় ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে। এ তাপমাত্রাকে ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রা বলা হয়। এমআরআই মেশিন তৈরিতে নাইওবিয়াম ধাতুসংকর ব্যবহার করা হয়। এটির তাপমাত্রা রাখা হয় ১০ ক্যালভিনের চেয়ে নিচে। শীতল রাখার কাজটি করা হয় তরল নাইট্রোজেন দিয়ে। এ ছাড়া গত মাসে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এক জার্নালে টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একদল গবেষক দেখান, ল্যানথেনাইড আর্সেনাইট পদার্থ ২৬ ডিগ্রি ক্যালভিন তাপমাত্রায় সুপার কনডাকটরের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। গবেষকেরা আশা করছেন, সুপার কনডাকটরের বৈশিষ্ট্য থেকে গবেষণা করে উচ্চ তাপমাত্রার সুপার কনডাকটরের ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রা সম্পর্কে জানা যাবে। যেসব পদার্থ যেমন নাইওবিয়াম, সিসা ইত্যাদি ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রার আগে ইলেকট্রন জোড়া গঠন করে। ফলে এসব পদার্থের ইলেকট্রনগুলো সুপার কনডাকটরের বৈশিষ্ট্য পেতে সাহায্য করে। তবে এ বৈশিষ্ট্য অধিক ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রার পদার্থের বেলায় কাজ করে না। নতুন এ সুপার কনডাকটর যে বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে তা নিয়ে এখন গবেষকেরা গবেষণা করে যাচ্ছেন, যা থেকে বোঝা যাবে, এটি থেকে ইলেকট্রন জোড়ার যে নতুন বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে, তাকে তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করা যায় কি না। সুপার কনডাকটরের জন্য এটি নতুন সুচনা। এখন দেখার বিষয় সামনে এ নিয়ে আরও কী হয়।