রাজধানীর রাস্তায় কী ঘটছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সাহায্যে তা নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে এক নিমিষেই দেখতে পারবেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থাও নিতে পারবেন তাঁরা। রাস্তায় যানজট, গাড়িগুলো কোন পথে যেতে হবে, এর নির্দেশনাও দেখা যাবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা ডিজিটাল বোর্ডে। আগামি জুন থেকেই এ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে রাজধানীর রাস্তায়। পুরো রাজধানীকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা এবং রাস্তার মোড়ে যানবাহন চলাচল-সংক্রান্ত নির্দেশনার জন্য ডিজিটাল বোর্ড বসানোর ৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। চলতি বছরের জুনে এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। পুলিশ টেলিকমের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ও প্রকল্প পরিচালক মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রকল্পের একটি টাওয়ার নির্মাণের দরপত্র তিনবার বাতিল করা হয়েছে। এ জন্য বিলম্ব হয়েছে। তবে জুনের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সুত্র জানায়, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষের আধুনিকীকরণ’ নামে এ প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন, সেগুলো সেকেলে। এসব বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাঠানো তথ্য কখনো গোপন থাকে না। এ ছাড়া একটি নেটওয়ার্কে একসঙ্গে একজনের বেশি কথা কেউ বলতে পারে না। এসব দিক বিবেচনা করে আধুনিক বেতার যোগাযোগ পদ্ধতির (ডিজিটাল রেডিও ট্রাংকিং সিস্টেম) যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুরোনো পদ্ধতির বদলে যে ব্যবস্থা আনা হচ্ছে, সেটিতে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) প্রযুক্তি রয়েছে। এমন ধারার প্রযুক্তি মার্কিন পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে।

নতুন প্রযুক্তিব্যবস্থায় রাজধানীর রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫৯টি স্থানে ১৫৫টি বিশেষ ধরনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। রোদ বা ঝড়-বৃষ্টিতে এসব ক্যামেরার কোনো ক্ষতি হবে না। বিশেষ ধরনের ক্যামেরগুলো বাইরে থেকে সাধারণত দেখা যাবে না। এগুলো তারহীন রেডিওলিংক প্রযুক্তির মাধ্যমে আবদুল গণি রোডের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সেখানে বসেই সব ক্যামেরা এদিক-সেদিক ঘোরানো যাবে এবং ক্যামেরায় দেখা দৃষ্ট কাছে বা দুরে আনা যাবে। এসব ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে পুলিশ রাস্তার দৃশ্য দেখতে ও ধারণ করতে পারবে। দৃশ্য দেখে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো নির্দেশনা দিতে পারবেন। ৩১টি স্থানে বসানো ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে যেসব দৃশ্য ফুটে উঠবে, পথে চলা মানুষ সেগুলো দেখতে পাবে। এসব পর্দার সাহায্যে রাস্তার যানবাহনকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হবে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পুলিশের প্রতিটি যানবাহনের সঙ্গে দেওয়া হবে এভিএল (অটোমেটিক ভেহিকল লোকেটার) পদ্ধতি। এতে করে কোন যান কোথায় আছে তা নিয়ন্ত্রণকক্ষের মনিটরে ডিজিটাল মানচিত্রে দেখা যাবে। পুলিশ বাহিনীর গাড়িগুলো কখন কোন রাস্তায় রয়েছে তাও জানা যাবে নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে। প্রকল্পের সাতটি এলাকার জন্য দেওয়া হবে দেড় হাজার ওয়াকিটকি ও ১২০টি মোবাইল ফোনসেট (গাড়িতে ব্যবহারের জন্য)। সাধারণ মানুষের সহজে যোগাযোগের জন্য ৯৯৯ ধরনের বিশেষ নম্বর থাকবে। এসব নম্বর থেকে দ্রুত পুলিশের সাহায্য নেওয়া যাবে। প্রকল্পে বলা হয়েছে, এ বেতার-যোগাযোগ সবচেয়ে আধুনিক ও নিরাপদ। কোনো সন্ত্রাসী ইচ্ছা করলেও এই নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারবে না। এতে করে আড়ি পেতে কেউ পুলিশ বাহিনীর কথাবার্তা শুনতে পারবে না। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে লিখিত বার্তা পাঠানো যাবে। এতে একসঙ্গে অনেকে কথা বলতে পারবেন।জরুরি বেতারবার্তাও পাঠানো যাবে। যেকোনো ফোন থেকে এ সেটে কল করা যাবে আবার পুলিশের এ বেতারযন্ত্র দিয়েও সব ফোনে কথা বলা যাবে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এ প্রযুক্তি স্থাপনের আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দল জরিপ চালায়। তাদের মতামতের পরই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। আবদুল গনি রোডে রেলভবনের পাশে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়। নির্মাণাধীন নিয়ন্ত্রণকক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা, মনিটর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে। সেখানে দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা জানান, এ প্রকল্পের জন্য নিয়ন্ত্রণকক্ষের পাশে ৩০০ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার নির্মাণ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ টাওয়ারের সঙ্গে ক্যামেরা ও ডিজিটাল বোর্ডগুলোকে যুক্ত করার জন্য রাজধানীর মহাখালী, মাতুয়াইল, উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে চারটি যন্ত্র (রিপিটার) বসানো হবে। প্রকল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাফা ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাকারিয়া বলেন, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশে এ ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এতে পুলিশের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।

সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো